লেখকঃ কাজী গণিউর রহমান
রপ্তানি খাতে বৈচিত্র্য ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রথমবার আয়োজন করা হচ্ছে Global Sourcing Expo 2025, Dhaka। এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো (EPB) এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথউদ্যোগে আগামী ১লা –৩রা ডিসেম্বর রাজধানীতে এ মেলার আয়োজন করছে। এই তিনদিনব্যাপী মঞ্চে স্থানীয় ১০০+ প্রতিষ্ঠান ও শতাধিক আন্তর্জাতিক ক্রেতা অংশ নেবে এবং আটটি প্রধান সেক্টরকে কেন্দ্র করে সরবরাহকারীর সন্ধান চালাবে; আয়োজনের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের সোর্সিং শক্তিকে একটি একক প্ল্যাটফর্মে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপন করা।
এক নজরে ইভেন্টের কাঠামো ও লক্ষ্য
Global Sourcing Expo-র মূল লক্ষ্য দেশীয় রপ্তানিকারীদের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, হোলসেলার ও সাপ্লায়ারদের সঙ্গে B2B মিটিং, সেমিনার ও নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে সংযোগ করা। আয়োজকরা বিনিয়োগ, ব্র্যান্ড অর্ডার, লং-টার্ম কনট্রাক্ট এবং সাপ্লাই-চেইন অংশীদারিত্ব স্থাপনকে প্রধান ফলাফল হিসেবে দেখছেন; অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক স্থান হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে Bangladesh–China Friendship Exhibition Centre (BCFEC), পুর্বাচল।
কোন সেক্টরগুলো অগ্রাধিকার পাবে
এই এক্সপোতে আটটি সেক্টরে পণ্য ও সেবা প্রদর্শিত হবে—রেডিমেড গার্মেন্টস (RMG), ফার্মাসিউটিক্যালস, আইসিটি ও আইটি সার্ভিস, হোম ডেকর ও ফার্নিচার, জুট ও জুট পণ্য, কৃষি-প্রসেসিং, প্লাস্টিক ও কিচেনওয়্যার, এবং লেদার/ফুটওয়্যার। আয়োজকরা মনে করেন এই সেক্টরগুলোতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই যোগ্যতা ও আকার নিয়েছে; এখন লক্ষ্য হচ্ছে মানোন্নয়ন ও ব্র্যান্ড-অর্ডার আনা।
EPB কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গত কয়েক মাস ধরে বিদেশি দূতাবাস, ট্রেড প্রমোশন অর্গানাইজেশন ও জয়েন্ট চেম্বারগুলোর সঙ্গে মাল্টি-ফোরাম আয়োজন করে ক্রেতাদের আগ্রহ তৈরি করা হয়েছে; ফলে চীন, জাপান, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ পর্যন্ত সম্ভাব্য ক্রেতাদের আগমন ধরা পড়বে। আয়োজকরা প্রত্যাশা করছেন, অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আইনজীবী, লজিস্টিক সাপ্লায়ার্স, রিটেইলার এবং বড় হোলসেলার থাকবে, যারা সরাসরি সোর্সিং চুক্তি করতে আগ্রহী।
অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রভাব — দীর্ঘমেয়াদী সম্ভাবনা
যদি এক্সপো সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় এবং পরে শক্তিশালী ফলো-আপ পরিচালনা করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের রপ্তানিখাতে কয়েকটি নির্দিষ্ট সুবিধা আসার সম্ভাবনা রয়েছে: প্রথমত, রপ্তানিতে পণ্যের ঘরানায় বৈচিত্র্য বাড়বে—বিশেষ করে উচ্চমূল্যের ফার্মা ও আইটি-সেবা থেকে বেশি রিটার্ন পাওয়া যাবে। দ্বিতীয়ত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সরাসরি বৈশ্বিক ক্রেতার সম্মুখে তাদের প্রোডাক্ট উপস্থাপন করে সাব্সেক্ট-ওর্ডার পেতে পারবে, যা রপ্তানির ভলিউম ও গুণমান উভয়ই বাড়াবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন—এবং EPB-ও এ কথা বলছে—প্রতিটি সফল B2B চুক্তি লজিস্টিক, মান নিয়ন্ত্রণ এবং সার্টিফিকেশন-খাতে সহায়ক ব্যবসাও সৃষ্টি করবে।
চ্যালেঞ্জ ও সতর্কতা
তবে সবকিছু ভালোভাবে কাজ করবে এমনটা ধরে নেয়া যায় না। বড় ক্রেতাদের জন্য মান, সাপ্লাই-টাইমলাইন এবং সোশ্যাল কমপ্লায়েন্সের মান নিশ্চিত করা অপরিহার্য; না হলে প্রাথমিক সাফল্য টেকসই অর্ডারে রূপান্তরিত হবে না। এছাড়া ছোট রপ্তানিকারীদের জন্য প্রদর্শনী খরচ, নমুনা-প্রস্তুতি, প্যাকেজিং ও আন্তর্জাতিক কাস্টম রেগুলেশন মানা—এসব বাস্তবগত বাধার জন্য বাজারে প্রবেশ সহজ করতে হবে। সরকারি চ্যানেল থেকে বুট-ফি সাবসিডি, ট্রেড মিশন ও প্রযুক্তি-ক্যাপাসিটি বিল্ডিং যদি নিশ্চিত করা হয়, তাহলে বাধাগুলো কমে যাবে।
কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা
আয়োজকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে আছে: (ক) অংশগ্রহণকারীদের জন্য প্রি-ম্যাচিং প্ল্যাটফর্ম চালু রাখা, (খ) প্রদর্শনী শেষে B2B-ফলো-আপ ট্র্যাকিং যন্ত্রপাতি গঠন, (গ) মান ও সার্টিফিকেশন নিয়ে দ্রুত সহায়তার জন্য এক্সপো-ভিত্তিক সেবা স্টেশন, এবং (ঘ) ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এক্সপ্রেস-বুটস্ট্র্যাপ ফাইন্যান্সিং বা সাবসিডি কার্যক্রম। এসব ব্যবস্থা নেওয়া হলে এক্সপো কেবল একটি ইভেন্ট থেকে স্থায়ী সোর্সিং প্ল্যাটফর্মে রূপ নিতে পারবে।
পরিশেষে, Global Sourcing Expo–2025 ঢাকায় আয়োজন কেবল এক প্রদর্শনী নয়—এটি বাংলাদেশের রপ্তানিখাতকে বৈশ্বিক সরবরাহচেইনে যুক্ত করার জন্য একটি কৌশলগত উদ্যোগ। বাস্তবায়ন ও পরবর্তী ফলো-আপ সফল হলে রপ্তানি-বহর বৈচিত্র্য লাভ করবে, নতুন বাজার উন্মোচন হবে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য বৈদেশিক আয় অর্জনের নতুন দরজা খুলবে। তবুও ফলাফল দেখতে হলে মান, লজিস্টিক ও নীতি-সহায়তায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি এবং এক্সপো-পরবর্তী ফলো-আপই হবে চূড়ান্ত পরীক্ষা।
প্রাসঙ্গিক জিজ্ঞাসা (FAQ)
প্রশ্নঃ এক্সপো কোথায় ও কখন অনুষ্ঠিত হবে?
উত্তরঃ Bangladesh–China Friendship Exhibition Centre (BCFEC), পুর্বাচল; ১লা –৩রা ডিসেম্বর ২০২৫।
প্রশ্নঃ কোন কোন সেক্টরে অংশ নেওয়া যাবে?
উত্তরঃ RMG, ফার্মা, আইসিটি/আইটি সেবা, হোম ডেকর/ফার্নিচার, জুট, কৃষি-প্রসেসিং, প্লাস্টিক/কিচেনওয়্যার ও লেদার/ফুটওয়্যার।
প্রশ্নঃ ছোট উদ্যোক্তা কিভাবে অংশ নেবে?
উত্তরঃ EPB-এর নোটিফাইড রেজিস্ট্রেশন এবং প্রি-ম্যাচিং প্রক্রিয়া অনুযায়ী; ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সহায়তা প্রোগ্রাম ও সেমিনার আয়োজন করা হবে।
তথ্যসূত্র
Export Promotion Bureau (EPB) — Global Sourcing Expo 2025 ডায়ো ও নোটিশ।




