লেখকঃ আফরোজ মজহার পূর্ণতা
আজকের বর্ধনশীল অর্থনীতিতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে “সাইড হাসল” শব্দটি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। অনেকেই ছাত্রাবস্থায় এখন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবার আশায় নিজ স্কিল অনুযায়ী অতিরিক্ত আয়ের উৎস তৈরী করে নিচ্ছেন। আবার অনেকে ফুল টাইম জবের পাশাপাশি আলাদা করে পার্ট টাইম কন্ট্রাক্ট ভিত্তিক চাকরি করে থাকেন। ট্র্যাডিশনাল চাকরির বাইরে বেরিয়ে বাড়তি আরো আয় করার এই ধারণাটিকে বলা হয়ে থাকে সাইড হাসল। সাইড-হাসল আয়ের পাশাপাশি স্কিল, নেটওয়ার্ক এবং ক্যারিয়ারের জন্য নতুন সম্ভাবনাও খুলে দেয়।
আজ থাকছে নতুনদের জন্য সেরা ৫টি সাইড হাসল আইডিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
সাইড হাসল আসলে কি?
সেরা সাইড হাসল জানার আগে জেনে নেওয়া যাক সাইড হাসল বলতে কি বুঝায়। এটি সাধারণত তরুণদের মধ্যে প্রচলিত একটি “স্ল্যাং” বিশেষ যার আভিধানিক অর্থ হলো বাড়তি জব বা প্রফেশন থেকে মূল আয়ের বাইরে অতিরিক্ত আয় উপার্জন করা। এই আয়ের উৎস হতে পারে পার্ট টাইম চাকরি কিংবা ফ্রিল্যান্সিং এমনকি নিজস্ব ক্রিয়েটিভ প্রজেক্ট। বর্তমানে সাইড হাসল অত্যাধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কেননা আয়ের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা, নেটওয়ার্কিং গড়ে তোলা সম্ভব যা ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। তাছাড়া ফোন বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, কন্টেট রাইটিং এন্ড ম্যানেজমেন্ট, AI প্রম্প্ট ক্রিয়েশন ইত্যাদি সাইড হাসল করা সম্ভব সম্পূর্ণ ঝামেলাবিহীন ভাবেই!
আরো পড়ুন : AI জেনারেটেড ভিডিও ব্যবহার করে কি ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করা সম্ভব?
নতুনদের জন্য জনপ্রিয় যে ৫টি সাইড হাসল
১. কন্টেন্ট রাইটিং বা কপিরাইটিং :
লেখালেখির প্রতি আগ্রহ থাকলে কনটেন্ট রাইটিং হতে পারে আপনার জন্য সেরা সাইড হাসল। বর্তমানে মার্কেটিং এজেন্সী, ব্লগার, স্টার্টআপ, অনলাইনভিত্তিক নিউজ চ্যানেল মানসম্মত কন্টেন্ট খুঁজে থাকে। আবার কপিরাইটিং (বিজ্ঞাপনী লেখা) বা SEO কন্টেন্ট রাইটিংয়ের চাহিদা বেড়ে চলেছে। রিমোট,অনসাইট কিংবা হাইব্রিড অপশনে খুঁজে নিতে পারেন আপনার পছন্দের কনটেন্ট রাইটিং জব। এছাড়া Fiverr, Upwork এর মতো প্ল্যাটফর্মে প্রোফাইল তৈরি করে কাজ পাওয়া যায়।
২. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট
আজকের দিনে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই চায় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ব্র্যান্ডিং গড়ে তুলতে। বেশিরভাগ উদ্যোক্তার পক্ষে নিয়মিত কন্টেন্ট তৈরি করা ও পেজ ম্যানেজ করা সম্ভব হয় না। তাই তারা ক্রিয়েটিভ মার্কেটিং এর আশায় নতুন প্রজন্মের তরুণদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। একজন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে আপনি তাদের ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল বা টিকটক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে Canva বা CapCut-এর মতো ফ্রি টুল ব্যবহার করে কন্টেন্ট বানানো, meta ad রান করা, পেজ মডারেট করতে হয়।
৩. কনটেন্ট ক্রিয়েশন এন্ড স্ট্র্যাটেজিস্ট :
নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম রিলস এবং টিকটক কন্টেন্ট ক্রিয়েশন খুবই জনপ্রিয়। তাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কনটেন্ট ক্রিয়েট ও স্ট্র্যাটেজিস্ট খুঁজে থাকে, যারা তাদের ব্র্যান্ড অনুযায়ী কনটেন্ট তৈরী এবং প্ল্যানিং স্ট্র্যাটেজি তৈরী করে দিবে। এক্ষেত্রে ছবি এবং ভিডিও এডিটিং, ক্রিয়েটিভ প্ল্যানিং,মেটা বিজনেস, কনটেন্ট ক্যালেন্ডার ইত্যাদি স্কিল থাকা প্রয়োজন।
৪. অনলাইন সেলিং বা ই-কমার্স :
বর্তমানে অনলাইন শপিং তুমুল জনপ্রিয়। তাই তরুণদের মধ্যে অনলাইনে আর্ট-ক্র্যাফট, পোশাক, কসমেটিকস, থ্রিফটেড প্রোডাক্ট ইত্যাদি বিক্রয়ের হার বেড়ে চলেছে। নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া পেজ বা Facebook Marketplace এর মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সহজেই ব্যবসা শুরু করা যায়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো,কম ইনভেস্টমেন্ট দিয়ে আয়ের পরিধি বাড়ানো যায়। তাই সাইড হাসল হিসেবে ক্রমেই এর চাহিদা বেড়ে চলেছে।
৫. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও প্রোগ্রামিং :
ডিজিটাল যুগে ওয়েবসাইট ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের চাহিদা তুঙ্গে। যারা কোডিংয়ে আগ্রহী, তাদের জন্য এটি সবচেয়ে লাভজনক সাইড-হাসল। HTML, CSS, JavaScript, Python বা WordPress ইত্যাদি জানা থাকলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়। তাছাড়াও Fiverr বা Upwork-এ সহজেই ক্লায়েন্ট পাওয়া যায়। ভবিষ্যতে আইটি সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তেও এই অভিজ্ঞতা কার্যকরী।
আরো পড়ুন : সেকেন্ড হ্যান্ড পণ্য বিক্রিতে সাফল্যের জন্য কার্যকর পরিকল্পনা
সাইড হাসল এর কার্যকারিতা এবং চ্যালেঞ্জসমূহ
অন্যান্য সকল কিছুর মতোই সাইড হাসল এর রয়েছে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
সুবিধা –
- ক্যারিয়ার এর উন্নয়ন
- অভিজ্ঞতা অর্জন
- নেটওয়ার্কিং সম্প্রসারণ
- বাড়তি আয় উপার্জন
চ্যালেঞ্জসমূহ –
- সময়ের বাধাবন্ধকতা
- অতিরিক্ত মানসিক স্ট্রেস বা চাপ
সাইড-হাসল শুরু করার জন্য বড় মূল্যের ইনভেস্টমেন্ট নয় বরং আপনার দক্ষতা, সময় এবং সৃজনশীলতা প্রয়োজন। ফ্রিল্যান্সিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ই-কমার্স বা কন্টেন্ট ক্রিয়েশন ; এই ৫টি আইডিয়ার যেকোনো একটি দ্বারা আপনিও শুরু করতে পারেন আপনার সাইড হাসল যাত্রা। ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা বাড়লে এটি আপনার প্রধান আয়ের উৎসেও পরিণত হতে পারে এবং ভবিষ্যর ক্যারিয়ারকে আরো সুদৃঢ় করবে,সাথে আর্থিক স্বাধীনতা তো আছেই।
প্রশ্নোত্তর (F&Q)
প্রশ্ন ১: সাইড-হাসল শুরু করার জন্য কত টাকা প্রয়োজন?
উত্তর: বেশিরভাগ সাইড-হাসল (যেমন ফ্রিল্যান্সিং, কন্টেন্ট রাইটিং বা অনলাইন টিউটরিং) খুব কম বিনিয়োগে শুরু করা যায়। শুধু একটি ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই যথেষ্ট।
প্রশ্ন ২: শিক্ষার্থীরা কি সাইড-হাসল করতে পারে?
উত্তর: অবশ্যই পারে। পড়াশোনার পাশাপাশি সাইড-হাসল করলে সময় ব্যবস্থাপনা শেখা যায় এবং ভবিষ্যতের জন্য অভিজ্ঞতা তৈরি হয়।
প্রশ্ন ৩: কোন সাইড-হাসলটি সবচেয়ে লাভজনক?
উত্তর: লাভজনকতা নির্ভর করে দক্ষতার উপর। তবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও ই-কমার্স ব্যবসা তুলনামূলকভাবে বেশি আয় এনে দিতে পারে।
প্রশ্ন ৪: কোন প্ল্যাটফর্মে ফ্রিল্যান্স কাজ শুরু করা ভালো?
উত্তর: Fiverr, Upwork, Freelancer এবং LinkedIn Marketplace নবীনদের জন্য জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম।
প্রশ্ন ৫: কন্টেন্ট ক্রিয়েশন বা ইউটিউবে সফল হতে কত সময় লাগে?
উত্তর: নিয়মিততা ও মানসম্মত কনটেন্টই সফলতার মূল। সাধারণত ৩–৬ মাসের মধ্যে ভালো ফলাফল দেখা যায় যদি কনটেন্ট SEO এবং ট্রেন্ড অনুযায়ী হয়।




