লেখকঃ আফরোজ মজহার পূর্ণতা
“সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন” বলতে আমরা শুধুমাত্র চাকরি বাছাই করাকে ভেবে থাকলেও, প্রকৃতপক্ষে এটি হলো নিজের স্কিল,আগ্রহ বা লক্ষ্য বুঝে ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া। ভুল ক্যারিয়ার নির্বাচন হতে পারে স্থায়ী হতাশা এবং আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণ। ২০২১ সালে The Harris Poll এর একটি সার্ভেতে উঠে আসে, ৩০-৪০ বছর বয়সী চাকরিজীবীদের মধ্যে প্রায় ৪৭ শতাংশ তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ। তাই সময় নিয়ে নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যারিয়ার অপশনকে কেন্দ্র করে একটি সুনির্দিষ্ট “ক্যারিয়ার গোল” বানানো অত্যন্ত প্রয়োজন।
আজকের বিস্তারিত আলোচনায় থাকছে কিভাবে ধাপে ধাপে সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করবেন এবং ক্যারিয়ার অপশন বাছাই এর প্রক্রিয়া।
কেন সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন প্রয়োজন
নিজের জন্য আদর্শ ক্যারিয়ার নির্বাচনের আগে জানা দরকার কেন এটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবনের অধিকাংশই আমরা কর্মক্ষেত্রে যাপন করি। তাই ক্যারিয়ারে মানসিক শান্তি, সন্তুষ্টি ও স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা জরুরি। ভুল ক্যারিয়ার তৈরী করে ফিন্যান্সিয়াল ইস্যু, আগ্রহের ঘাটতি এবং সার্বিক দুশ্চিন্তা। ফলে বাকি জীবন আফসোস ও হতাশা নিয়ে কাটানো ছাড়া করার কিছু থাকে না। সুতরাং, সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করতে হবে ধাপে ধাপে এবং নিজের স্বাচ্ছন্দের কথা মাথায় রেখে।
আরো পড়ুন : SMART Goal দিয়ে সফল ক্যারিয়ার পরিকল্পনা: জানুন কিভাবে জীবনের পথ …
নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা যাচাই করুন
ক্যারিয়ার বাছাইয়ের আগে নিজেকে জানুন, নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা যাচাই করুন। তাহলে ক্যারিয়ার জীবন হয়ে উঠবে সহজ এবং আনন্দের। যদি আপনি বিশ্লেষণ বা সংখ্যার সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করেন, তাহলে ডেটা অ্যানালিটিক্স, ফাইন্যান্স বা রিসার্চ হতে পারে আপনার ক্যারিয়ার পথ। আবার পড়াতে ভালোবাসলে শিক্ষকতা, জার্নালিজম ভালো লাগলে সাংবাদিকতা ইত্যাদি। তবে নিজের দক্ষতা ও আগ্রহ একসাথে করা প্রয়োজন। নাহয় হিতে বিপরীত হয়ে কর্মক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।
নিজের দক্ষতা মূল্যায়নের জন্য ক্যারিয়ার অ্যাপটিটিউড টেস্ট বা ক্যারিয়ার বিষয়ক অনলাইন কুইজে অংশ নিয়ে দেখুন, যেমন জনপ্রিয় লার্নিং প্ল্যাটফর্ম Coursera তে পাবেন ক্যারিয়ার নির্বাচন টেস্ট ( Career Test: What Career is Right for Me Quiz? [Free] – Coursera )
নিজের ভ্যালু এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
ক্যারিয়ার নির্বাচন করার আগে আপনার ভ্যালু সম্পর্কে ধারণা রাখুন এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার গ্রোথ বা সামাজিক উন্নয়ন নাকি সৃজনশীলতা, আপনার কাছে কোনটির মূল্য বেশি তা ভাবুন। এই ভ্যালু অনুযায়ী ক্যারিয়ার বাছাই না করলে পরবর্তীতে ক্যারিয়ার জীবন হয়ে উঠে হতাশাপূর্ণ। একটি সফল ক্যারিয়ার গড়ার জন্য দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য থাকা দরকার।
নিজেকে যে প্রশ্ন করবেন তা হলো :
“আমি আগামী কয়েক বছরে কোথায় থাকতে চাই?”
“এই চাকরি কি আমাকে সেই জায়গায় পৌঁছে দেবে?”
এভাবে লক্ষ্য স্থির করুন।
চাকরির বাজার ও চাহিদা বুঝে নিন
শুধু আগ্রহ নয়, চাকরির বাজারও এখন বিবেচ্য বিষয়। কোন সেক্টরে চাহিদা বাড়ছে এবং সেই অনুযায়ী আপনার দক্ষতা ও আগ্রহ রয়েছে কিনা যাচাই করুন।
২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে যেসব খাতে চাকরির সুযোগ দ্রুত বাড়ছে সেগুলো হলো:
আইটি ইন্ডাস্ট্রি ও প্রোগ্রামিং
ডিজিটাল মার্কেটিং ও কনটেন্ট ক্রিয়েশন
হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিউটিক্যাল
নবায়নযোগ্য জ্বালানি (Renewable Energy)
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া
চাকরির বাজার অনুযায়ী স্কিল আপডেট করা এখন ক্যারিয়ার টিকিয়ে রাখার অন্যতম কৌশল।
মেন্টর ও অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিন
যারা ইতিমধ্যে আপনার পছন্দের ক্যারিয়ার সেক্টরে সফল, তাদের মেন্টরশীপ আপনাকে যথাযথ গাইড দিবে। LinkedIn, Facebook ইত্যাদি প্লাটফর্মে কানেক্টেড থাকুন বা বিভিন্ন ওয়ার্কশপে অংশ নিন। মেন্টর থাকলে তিনি আপনাকে সঠিক গাইডলাইন দিতে পারেন, যেমন কোন কোর্স করবেন বা কোন স্কিল ডেভেলপ করবেন।
প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন :
ক্যারিয়ার জীবনে প্রবেশ করতে বর্তমান যুগে নির্দিষ্ট স্কিল থাকা অনেক প্রয়োজন।ইত্যাদির বাইরে কমিউনিকেশন স্কিল, সমস্যা সমাধান, টিম ওয়ার্ক, ক্রিয়েটিভিটি স্কিল আবশ্যিক। আবার, ক্যারিয়ার অপশন বাছাই করতে অবশ্যই বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা প্রয়োজন,এতে আপনার জন্য কোন পেশা ভালো হবে তা সম্পর্কে একটি ধারণা পাবেন। ইন্টার্নশিপ, স্বেচ্ছাসেবা (volunteering) বা ফ্রিল্যান্স প্রজেক্টে অংশ নিয়ে অভিজ্ঞতা নিন। এভাবে কাজের ধরণ, চাপ ও বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
আরো পড়ুন : ফ্রেশারদের জন্য ৭টি সেরা স্কিল যা চাকরি ও আয় দুটোতেই কাজে আসে
নির্বাচিত ক্যারিয়ারের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন
আপনার জন্য সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন শেষ হলে যেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন তা হলো –
১. নিজের সিভি আপডেট করুন
২. নির্বাচিত ক্যারিয়ার এর সাথে মিল রেখে স্কিল অর্জন করুন
৩. প্রতিটি চাকরিতে ডেসক্রিপশন অনুযায়ী সিভি টেইলরিং বা এডিট করুন
৪. প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন
সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন মানে নিজের ভবিষ্যৎ এর একটি বড় অংশ নির্ধারণ। নিজের আগ্রহ, বাজারের চাহিদা ও দক্ষতার মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করতে পারলে কর্মক্ষেত্র হবে প্রশান্তির। তাই নিজের আগ্রহ এবং ভ্যালুকে প্রাধান্য দিয়ে সঠিকভাবে ক্যারিয়ার বাছাই করুন।
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্ন ১: ক্যারিয়ার নির্বাচনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী?
উত্তর: নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা—এই দুইয়ের সমন্বয়ই সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচনের মূল চাবিকাঠি।
প্রশ্ন ২: চাকরির বাজারে কোন দক্ষতাগুলো এখন বেশি দরকার?
উত্তর: ডিজিটাল মার্কেটিং, প্রোগ্রামিং, ডেটা অ্যানালিটিক্স, গ্রাফিক ডিজাইন ও কমিউনিকেশন স্কিল এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদাসম্পন্ন।




