বর্তমান কর্পোরেট দুনিয়ায় প্রতিযোগিতা কেবল প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখন ব্র্যান্ডের ভেতরে থাকা মানুষদের প্রতিচ্ছবিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে C-level executives—যারা কোম্পানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেন—তাদের ব্যক্তিগত উপস্থিতি ও ভাবমূর্তি LinkedIn-এর মতো প্ল্যাটফর্মে নতুন মাত্রা পেয়েছে।
এখন সময় এসেছে নিজেদের সম্পর্কে শুধু নির্দিষ্ট designation বা success-এর গল্প না বলে, বাস্তব অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বের দর্শন এবং মানুষ হিসেবে আপনি কী বিশ্বাস করেন—সেটা সামনে আনার।
কেন Personal Branding অপরিহার্য হয়ে উঠেছে?
মানুষ এখন কোম্পানির লোগোতে নয়, তার পেছনের ব্যক্তিত্বে বিশ্বাস রাখতে চায়। একজন CEO, CMO কিংবা CTO হিসেবে আপনি কীভাবে চিন্তা করেন, কীভাবে সিদ্ধান্ত নেন, কিংবা ব্যর্থতা থেকে কী শিখেছেন—এই বিষয়গুলোই আপনার নেতৃত্বকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। আপনি যখন নিজের ভিন্নধর্মী অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, তা অন্য decision-maker, ট্যালেন্ট এবং ক্লায়েন্টদের সঙ্গে আপনাকে আরও সংযুক্ত করে।
LinkedIn এই জায়গাটা দিয়েছে—যেখানে আপনি আপনার নেতৃত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিক দিকগুলোকে এমনভাবে তুলে ধরতে পারেন, যা আপনার কোম্পানির ব্র্যান্ডকেও আরও শক্তিশালী করে।
কীভাবে একজন C-Level Executive হিসেবে LinkedIn Strategy তৈরি করবেন?
প্রথমেই গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের প্রোফাইলটি সাজানো। সেখানে শুধুমাত্র “CEO at ABC Ltd.” লিখে থেমে যাওয়া যাবে না। আপনি কোন দিক নিয়ে কাজ করছেন, আপনার প্যাশন কী, এবং আপনি কী ধরণের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন—এই বিষয়গুলো headline ও summary-তে ফুটে উঠতে হবে।
পরবর্তী ধাপে আসে কনটেন্ট। কনটেন্ট মানেই প্রতিদিন কিছু না কিছু পোস্ট করা নয়। বরং, সপ্তাহে দুই-তিনটি মানসম্মত, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নির্ভর, অথবা ব্যবসায়িক পর্যবেক্ষণমূলক পোস্ট করলেই যথেষ্ট। আপনি যদি honest থাকেন, industry-র real problem নিয়ে কথা বলেন, নিজের টিমের উন্নয়ন কিংবা culture গড়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন, সেটাই বেশি connect করে।
এছাড়া নিজের টিমের সদস্যদের কন্টেন্টেও যুক্ত হওয়া প্রয়োজন। লাইক-কমেন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে, তাদের অর্জন ও ভ্যালু প্রকাশে নিজে থেকেও সাপোর্ট করা উচিত। এতে করে অভ্যন্তরীণ সম্পর্ক যেমন মজবুত হয়, তেমনি বাইরের দৃষ্টিতেও একটা human-centric leadership image তৈরি হয়।
Leadership-সংক্রান্ত যে কোনো সিদ্ধান্ত—যেমন কাজের নমনীয়তা, ইনোভেশন নিয়ে চিন্তাভাবনা, বা টিম ম্যানেজমেন্টের চ্যালেঞ্জ—এই বিষয়গুলো আপনি যত সাবলীলভাবে তুলে ধরতে পারেন, ততই আপনি হয়ে উঠবেন এক জন authentic thought leader।
LinkedIn-এ শুধু নিজের কনটেন্টই যথেষ্ট নয়। আপনার ইন্ডাস্ট্রির অন্য মানুষ কী বলছে, তার প্রতিও মনোযোগ দেওয়া উচিত। উপযুক্ত জায়গায় মন্তব্য করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করা, উপদেশ দেওয়া বা কাউকে প্রশংসা করা—এসব কিছু মিলেই একটি নিখুঁত ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে।
কী ধরনের কনটেন্ট সবচেয়ে বেশি কাজ করে?
যদি ভাবেন, “আমি তো motivational speaker না”, তাহলে চিন্তার কিছু নেই। LinkedIn-এ মানুষ fancy speech খোঁজে না। বরং, তারা দেখতে চায়—আপনি একজন CXO হিসেবে কীভাবে বাস্তব সমস্যার সমাধান করেছেন, কোথায় ব্যর্থ হয়েছেন, কী শিখেছেন, এবং কীভাবে আগামীর জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন।
আপনি চাইলে occasional behind-the-scenes, product launch এর সময়কার ব্যস্ততা, কিংবা team retreat-এর কিছু মুহূর্ত শেয়ার করতে পারেন। তবে এগুলো যেন সবসময় “purposeful” হয়—মানে, এটা বোঝাতে হবে যে আপনার নেতৃত্বে কোম্পানির মানুষ ভালো কিছু শিখছে বা ভালো সময় কাটাচ্ছে।
আরো পড়ুনঃ AI নিয়ে বাংলাদেশের কর্পোরেট জগতে চলছে গোপনে বড় পরিবর্তন: আপনার ব্যবসার জন্য যা জানা জরুরি!
উপসংহার
LinkedIn এখন কেবল একটা রেজ্যুমে শেয়ার করার জায়গা না। এটা এমন একটা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করলে আপনার ব্যক্তিগত ব্র্যান্ড, আপনার কোম্পানির ভাবমূর্তি, এবং পুরো ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার credibility একসঙ্গে বাড়ে।
C-level executives যারা এখনো শুধু কোম্পানির পেজে নির্ভর করছেন, তাদের বোঝা দরকার—মানুষ এখন মানুষের সঙ্গে connect করে, কোম্পানির সঙ্গে নয়। আপনার ব্যক্তিগত উপস্থাপনই ভবিষ্যতের পার্থক্য তৈরি করবে।
এখনই সময় নিজের ভেতরের সেই leader-টিকে LinkedIn-এ তুলে ধরার, যিনি কেবল সিদ্ধান্ত নেন না, বরং একটা সময়ের গল্প তৈরি করেন।
আরো পড়ুনঃ অফিসে ট্যালেন্ট ধরে রাখার সিক্রেট ফর্মুলা: Employee Experience-এর ৫টি স্তম্ভ




