বাংলাদেশে সরকারি সেবার আধুনিকায়নের যাত্রা আরও বেগবান হয়েছে। বর্তমান সরকার ই-গভর্নমেন্ট কাঠামোর সম্প্রসারণ এবং প্রযুক্তি-নির্ভর সেবা প্রদানে জোর দিয়েছে, যার ফলে নাগরিকরা ঘরে বসেই সহজে সরকারি সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর এই উদ্যোগ দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রমকে আরও স্বচ্ছ, দ্রুত এবং মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
১. ই-গভর্নমেন্ট সেবার বিস্তৃতি
বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলাতেই সক্রিয়ভাবে ই-সেবা কেন্দ্র চালু রয়েছে। ভূমি খতিয়ান, জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, পাসপোর্ট আবেদন, আয়কর রিটার্ন দাখিলসহ বিভিন্ন সরকারি কার্যক্রম এখন ডিজিটাল মাধ্যমে সম্পন্ন করা সম্ভব।
এর মাধ্যমে সরকারি অফিসে ঘুরাঘুরির দিন শেষ হয়েছে বহু মানুষের জন্য। বিশেষ করে জেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রের কার্যকারিতা গ্রামীণ জনগণের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
২. মানুষের হাতের মুঠোয় সেবা
সরকারের লক্ষ্য হলো—প্রতিটি নাগরিক যেন স্মার্টফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে তার প্রয়োজনীয় সরকারি সেবা ঘরে বসেই পেতে পারেন। এই উদ্দেশ্যে ‘মাইগভ’ (MyGov) অ্যাপ ও ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে ২০০-এরও বেশি সরকারি সেবা পাওয়া যাচ্ছে।
একইসঙ্গে একটি জেলা, একটি ওয়েবসাইট নীতিমালার আওতায় প্রতিটি জেলা প্রশাসন তাদের নিজস্ব ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে।
৩. স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নতুন ধারা
ই-গভর্নমেন্ট সেবা ব্যবস্থায় ডেটা ডিজিটাল হওয়ায় দুর্নীতি হ্রাস এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নাগরিকেরা এখন সেবা গ্রহণের স্ট্যাটাস ট্র্যাক করতে পারেন, অভিযোগ জানাতে পারেন, এমনকি ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে ফি পরিশোধ করতে পারেন।
উদাহরণস্বরূপ, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের ফলে ভুয়া রশিদ ইস্যু বা দালালের জালিয়াতি বন্ধ হয়েছে।
৪. ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
২০২৫ সালের মধ্যে সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করছে, যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ব্লকচেইন, এবং ডেটা অ্যানালাইটিক্স ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্প হিসেবে ডিজিটাল নাগরিক পরিচয় (Smart NID), ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা, এবং AI-ভিত্তিক প্রশাসনিক স্বয়ংক্রিয়করণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
উপসংহার
ই-গভর্নমেন্ট সেবার এই রূপান্তর শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার নয়—এটি একটি চিন্তার পরিবর্তন। যেখানে মানুষকে কেন্দ্র করে, দ্রুত ও কার্যকর সেবা দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও মানবিক, গতিশীল এবং ফলপ্রসূ করে তোলার এই প্রয়াস একটি নতুন বাংলাদেশ গঠনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে।
আলোচিত বিষয়সমূহঃ
- ডিজিটাল বাংলাদেশ
- ই-গভর্নমেন্ট সেবা
- সরকারি ডিজিটাল সেবা
- অনলাইন সরকারি সেবা
- স্মার্ট বাংলাদেশ
- মাইগভ অ্যাপ
- ভূমি উন্নয়ন কর অনলাইন