বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence) বা এআই (AI) শুধুমাত্র প্রযুক্তির কোনো দৃষ্টিনন্দন উদ্ভাবন নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে কর্মক্ষেত্রে এক বিশাল বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু। বিশেষ করে সাদা কলার চাকরি (White Collar Jobs) — যেমন প্রশাসনিক, ব্যবস্থাপনা, হিসাবরক্ষণ, মানবসম্পদ, মার্কেটিং এবং আইটি — এই সেক্টরগুলোতে এআই এর প্রভাব চোখে পড়ার মতো।
এআই কিভাবে কর্মস্থলে পরিবর্তন আনছে?
কর্মস্থলে এআই এখন শুধু ডেটা বিশ্লেষণ বা অটোমেশনেই সীমাবদ্ধ নয়। এখন GPT-এর মতো জেনারেটিভ এআই টুল দিয়ে রিপোর্ট লেখা, ইমেইল রিপ্লাই, মার্কেট রিসার্চ, এমনকি কনটেন্ট কনসেপ্ট ডেভেলপমেন্টও সম্ভব। এতে যেমন সময় বাঁচছে, তেমনি প্রয়োজন কমছে মানুষের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে সাদা কলার চাকরির একটি বড় অংশ চাকরি হারানোর ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তবে এর মানে এই নয় যে সব চাকরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে — বরং কিছু চাকরি হারাবে, কিছু রূপান্তরিত হবে, আবার নতুন অনেক চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।

কোন সাদা কলার চাকরিগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে?
১. ডেটা এন্ট্রি ও প্রশাসনিক সহকারী
২. বেসিক গ্রাফিক ডিজাইন ও কন্টেন্ট লেখা
৩. অ্যাকাউন্টিং ও অডিটিং এর রুটিন কাজ
৪. কাস্টমার সার্ভিস যেটা স্ক্রিপ্ট ভিত্তিক
৫. আইনি সহকারীর বিশ্লেষণভিত্তিক কাজ
এইসব ক্ষেত্রে এআই সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য বিশ্লেষণ, ইমেইল কমিউনিকেশন, এবং ডকুমেন্ট প্রস্তুতির মতো কাজ করতে পারে। ফলে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো খরচ কমাতে চাইলে এইসব পজিশনের পরিবর্তে এআই টুল ব্যবহার করবে।
তবে সবাই কি চাকরি হারাবে?
না। বরং এআই এর যুগে সবচেয়ে মূল্যবান হয়ে উঠবে সেইসব দক্ষতা, যেগুলো কেবল মানুষের পক্ষেই সম্ভব — যেমনঃ
- সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা
- সৃজনশীলতা (Creativity)
- ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স
- কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ
- নেতৃত্ব এবং টিম ম্যানেজমেন্ট
এই স্কিলগুলো এখন থেকে উন্নয়ন করলে কর্মজীবনে এআই এর যুগেও টিকে থাকা সম্ভব হবে।
এআই যুগে ক্যারিয়ার গড়ার নতুন সুযোগ
যদিও কিছু চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে, তবে নতুন কিছু ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, যেমন:
- এআই মডেল ট্রেইনার
- প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার
- এআই ইথিক্স স্পেশালিস্ট
- ডেটা বিশ্লেষক
- অটোমেশন কনসালটেন্ট
এইসব পজিশনের জন্য নতুন দক্ষতা অর্জন জরুরি। ভবিষ্যতের চাকরি হবে স্কিল ভিত্তিক, ডিগ্রি নয় — এমনটাই বলছে গ্লোবাল রিসার্চ।
কর্পোরেট লেভেলে কী পরিবর্তন আসছে?
কর্মস্থলে এআই ইন্টিগ্রেশন কর্পোরেট কালচারে নতুন মাত্রা যুক্ত করছে। এখন ম্যানেজাররা ডেটা ড্রিভেন ডিসিশন নিচ্ছেন, HR বিভাগ এআই দিয়ে রিজিউমে স্ক্যান করছে, এবং মার্কেটিং টিম কাস্টমার বিহেভিয়ার বিশ্লেষণে এআই ব্যবহার করছে।
বাংলাদেশের কর্পোরেট সেক্টরও পিছিয়ে নেই। ব্যাংক, টেলিকম, ই-কমার্স এমনকি মিডিয়া সেক্টরও ধীরে ধীরে এআইকে কাজে লাগাতে শুরু করেছে।
উপসংহার
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব থেকে বাঁচার উপায় নয়, বরং এর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। যারা এখন থেকেই নিজের স্কিল আপডেট করবেন, এআই টুল ব্যবহার করতে শিখবেন, তারা ভবিষ্যতের কর্মজগতে এগিয়ে থাকবেন।
তাই এখন সময় — ভয় পাওয়ার নয়, প্রস্তুত হওয়ার।
আলোচিত বিষয়সমূহঃ
- কর্মস্থলে এআই
- সাদা কলার চাকরি
- এআই এর প্রভাব
- চাকরি হারানোর ঝুঁকি
- ভবিষ্যতের চাকরি
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা
- কর্পোরেট সেক্টরে এআই
- AI in Bangladesh workplace
- এআই যুগে ক্যারিয়ার