গ্রাফিক ডিজাইনিং ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে বহুল চাহিদা সম্পন্ন একটি দক্ষতা হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সময়ে গ্রাফিক ডিজাইনিং সম্পর্কে ধারণা থাকলেও গ্রাফিক ডিজাইন কি এবং গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ সম্পর্কে অনেকের মাঝেই সামান্য ধারণা অথবা অস্পষ্ট ধারণা দেখা যায়। অনেকেই মনে করে থাকেন গ্রাফিক ডিজাইনিং হল ফটোশপ, ইমেজ এডিটিং অথবা লোগো ডিজাইনের কাজ। তবে এগুলো গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কাজের অন্তর্ভুক্ত হলেও এর বিস্তৃতি বেশ ব্যাপক। অনলাইন ডিজাইনিং ভিত্তিক পেশা গুলোর প্রধান এবং অন্যতম হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইনিং।
গ্রাফিক ডিজাইন কি?
গ্রাফিক ডিজাইন হল এক ধরনের সৃজনশীল শিল্প যা কম্পিউটার সফটওয়্যার এর মাধ্যমে একটি তথ্য বা ম্যাসেজকে বিভিন্ন কলা কৌশলের মাধ্যমে নানা আঙ্গিকে তুলে ধরতে পারে। এটি এক ধরনের শিল্প বা আর্ট। যিনি গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করে থাকেন তাকে গ্রাফিক্স ডিজাইনার বলা হয়। একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের কাজ হল কাজ হল ডিজাইন করা এবং ক্লায়েন্টের সাথে তার ডিজাইনিং এর কাজ এবং সার্ভিস গুলোর সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেয়া। শুধুমাত্র ডিজাইন করা নয়, ডিজাইন এর মাধ্যমে ক্লায়েন্টের সাথে মেলবন্ধন তৈরি করাও একজন দক্ষ গ্রাফিক ডিজাইনের এর কাজ।
জার্মান থেকে আগত “গ্রাফিক” শব্দটি মূলত চিত্র দ্বারা নকশা তৈরি করাকে বুঝালেও গ্রাফিক ডিজাইনিং করতে প্রয়োজন ব্যক্তির নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি এবং সৃজনশীলতা।
গ্রাফিক ডিজাইনিং মূলত বিভিন্ন কোম্পানির ফটো এডিটিং, লোগো ডিজাইন, প্রোডাক্ট ডিজাইন সহ ওয়েবসাইটের বিভিন্ন গ্রাফিক রিলেটেড কাজ গুলো হয়ে থাকে গ্রাফিক ডিজাইনিং এর মাধ্যমে। এছাড়াও কোম্পানির ব্যানার, পোস্টার এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কনটেন্ট তৈরিতে এটি ব্যবহার করা হয়। একজন গ্রাফিক ডিজাইনার তার নিজস্ব কর্মদক্ষতা, ক্রিয়েটিভিট আইডিয়াকে কাজে লাগিয়ে ইউনিক ডিজাইন এর গ্রাফিক তৈরি করে থাকেন।
গ্রাফিক্স ডিজাইন কিভাবে শিখব?
বর্তমানে গ্রাফিক ডিজাইনিং এবং দক্ষ গ্রাফিক ডিজাইনার এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে এবং ভবিষ্যতেও এর ব্যাপক চাহিদা থাকবে।
গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কাজ করার পদ্ধতি অন্যান্য কাজের তুলনায় সহজ এবং কাজের স্বাধীনতা রয়েছে। বাড়িতে বসে আয় করার একটি অন্যতম পন্থা হলো গ্রাফিক্স ডিজাইনিং। গ্রাফিক ডিজাইনিং করার জন্য নির্দিষ্ট কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ঘরে বসে নিজস্ব ল্যাপটপে বা কম্পিউটারে খুব সহজেই গ্রাফিক ডিজাইন এর কাজটি করে নেওয়া যায়। গ্রাফিক ডিজাইনিং এর মাধ্যমে চাকরির পাশাপাশি অধিক আয়ের সুযোগ রয়েছে।
গ্রাফিক ডিজাইনের শেখার জন্য উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র দক্ষতা অর্জনের জন্য যতটুকু জ্ঞান প্রয়োজন, ততটুকু জ্ঞানের মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কাজ শেখা সম্ভব। কোন এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড অথবা সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন পড়ে না এবং যেকোন বয়সের যেকেউ এই দক্ষতা অর্জন করার মাধ্যমে গ্রাফিক ডিজাইনিং এর কাজটি করতে পারে।
বর্তমানে অনেকেই ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রাফিক ডিজাইনিং বেছে নিতে চান। গ্রাফিক ডিজাইনিং শিখতে এবং দক্ষতাটি অর্জন করতে আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন। তবে কিভাবে শুরু করবেন এবং কিভাবে শিখতে হবে সে সম্পর্কে দ্বিধাহীনতায় ভুগেন। তবে দক্ষতাটি অর্জনের জন্য শেখার আগ্রহ পাশাপাশি যথেষ্ট ধৈর্য এবং কিছু ইউনিক টেকনিক জানা থাকলে খুব সহজেই গ্রাফিক ডিজাইনিং শেখা সম্ভব। গ্রাফিক ডিজাইনিং শেখার সময় কিছু বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং শেখার কাজকে সহজতর করবে।
গ্রাফিক ডিজাইনিং এর মাধ্যমে মূলত ব্যক্তির সৃজনশীলতা বা ক্রিয়েটিভিটি প্রকাশ পায়। তবে দক্ষতা অর্জনের জন্য শেখার পাশাপাশি নিয়মিত প্রাক্টিস করার ব্যাপারটি জরুরী। শেখার পরবর্তীকালে ব্যক্তিকে নিয়ম করে প্র্যাকটিসের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে।
প্রাথমিকভাবে স্কিল ডেভেলপমেন্ট করে গ্রাফিক ডিজাইনিং এর সব রকমের কাজ এ পারদর্শী করার পর নিজেকে গ্রাফিক ডিজাইনিং ফিল্ডে এক্সপার্ট করে তোলার জন্য নিয়মিত প্র্যাকটিসের বিকল্প নেই।
গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ করা হয় এমন সব কোম্পানি গুলোর কাজকে আগে থেকেই টার্গেট করে সেই অনুযায়ী গ্রাফিকের দক্ষতা অর্জন করা এবং সহজে কাজ পাওয়া সম্ভব হয়।
শেখা সম্পন্ন হওয়ার পরবর্তীতে কাজ পাওয়ার জন্য অবশ্যই নিজের তৈরি গ্রাফিকের কিছু কাজসমূহ পোর্টফোলিও সাইডে আপলোড করে রাখার মাধ্যমে ক্লাইন্টকে ব্যক্তির কাজ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া যায়।
গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার ওয়েবসাইট।
বর্তমানে গ্রাফিক ডিজাইন শেখার জন্য বিভিন্ন প্লাটফর্ম রয়েছে। অনলাইন এবং অফলাইন দুটি মাধ্যমেই শেখার বিভিন্ন মাধ্যম এবং ব্যবস্থা রয়েছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং ইউটিউবে গ্রাফিক ডিজাইন কে কেন্দ্র করে লক্ষাধিক ভিডিও রয়েছে। গ্রাফিক ডিজাইনের ধারণার দেয়া থেকে শুরু করে রয়েছে বিভিন্ন কোর্সসমূহ যার মাধ্যমে ধাপে ধাপে গ্রাফিক ডিজাইনিং সম্পর্কে পারদর্শী হওয়া সম্ভব। ইউটিউবের পাশাপাশি লিংকডিন, ইউডেমি ইত্যাদি অনলাইন প্লাটফর্ম গুলো গ্রাফিক ডিজাইন শেখার অন্যতম মাধ্যম।
গ্রাফিক্স ডিজাইন কি কি শেখানো হয়।
গ্রাফিক ডিজাইনিং শেখার জন্য প্রথমেই আপনাকে বেশ কিছু ব্যাপারে ধারণা নিতে হবে এবং গ্রাফিক ডিজাইনিং এর সেক্টর সমূহ সম্পর্কে জানতে হবে। গ্রাফিক ডিজাইনের বেশ কিছু সেক্টর রয়েছে। যেমন Adobe Photoshop, UI, UX, visual, interaction, motion, print design, packaging design, art & illustration ইত্যাদি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেয়া আবশ্যক এবং পরবর্তীতে ধাপে ধাপে প্রত্যেকটি সেক্টরে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে গ্রাফিক ডিজাইনিং শেখা সম্ভব। এছাড়া ব্যক্তির ক্রিয়েটিভিটি এবং বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ আরো বেশি আকর্ষণীয় করে তোলা হয়।
গ্রাফিক ডিজাইনের ভবিষ্যৎ
বর্তমান যুগে গ্রাফিক ডিজাইনের ব্যবহার মানুষের দৈনন্দিন কাজের সাথে বেশ সম্পৃক্ত হয়ে আছে।
গ্রাফিক ডিজাইন এর উপর ভিত্তি করে ব্যবসার একটি বিশাল সম্ভাবনার তৈরি হয়েছে। এছাড়াও কাজে পারদর্শীদের জন্য বহুমুখী প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ রয়েছে।শুধুমাত্র অনলাইন কেন্দ্রিক নয়, বিভিন্ন পোস্টার, বিলবোর্ড তৈরিতে এর ব্যবহার রয়েছে গ্রাফিক ডিজাইনের চাহিদা বর্তমান সময়ে ব্যাপক। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বয়সের মানুষ গ্রাফিক ডিজাইনিং শিখতে আগ্রহী হচ্ছেন। নির্ভরযোগ্য পেশা হওয়ায় ঘরে বসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করা সম্ভব হচ্ছে গ্রাফিক ডিজাইনিং এর মাধ্যমে। শুধুমাত্র দেশে নয়, অন্যান্য দেশের গ্রাফিক ডিজাইনিং এর কাজ করা সম্ভব।
গ্রাফিক্স ডিজাইনটি আপওয়ার্কের সর্বাধিক ডিমান্ড অনুযায়ী দক্ষতার তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কর্পোরেট অফিসগুলো একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার কে ৩০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিমাসে প্রধান করে থানা না কে। দেশের বাইরে ও বিভিন্ন দেশে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এবং গ্রাফিক ডিজাইনারের আয় অন্যান্য চাকুরীজীবীদের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাক। Payscale অনুযায়ী, একজন দক্ষ গ্রাফিক ডিজাইনারের গড় বার্ষিক বেতন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় $46,000 এবং কানাডায় $44,000। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিনিয়র গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য, গড় বছরে $62,000 পর্যন্ত আয় করে থাকেন।
তবে গ্রাফিক ডিজাইনিং শেখার পরবর্তীতে সাথে সাথেই অনেক টাকা আয় করার ব্যাপারটি ভ্রান্ত।
গ্রাফিক্স ডিজাইন করে কত টাকা আয় করা যায় তা নির্ভর করবে আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনিং এর কোন সাব সেক্টরের উপর কাজ করছেন। সেক্ষেত্রে আপনি যদি দক্ষ হয়ে থাকে তাহলে দক্ষতা অনুযায়ী একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আপনি প্রতিমাসে বাংলাদেশের পেমেন্ট রেট অনুযায়ী ৪০+ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রচারণার জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব দিনের পর দিন বেড়েই চলছে এবং তার পাশাপাশি গ্রাফিক ডিজাইনিং এর ব্যবহারে গুরুত্ব বেড়েছে। সময়ের সাথে দক্ষ গ্রাফিক ডিজাইনারের চাহিদাও ব্যাপক হারে বেড়েছে। গ্রাফিক ডিজাইনিং বর্তমানে একটি বিশাল আয়ের উৎস এবং এটি অনলাইন অফলাইন উভয় জগতের জন্যই বেশ সম্ভাবনাময়।