বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় চার কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। ইন্টারনেটের বদৌলতে সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয়। এর মাধ্যমে যেকোনো কাজ এখন ঘরে বসেই করা যায়। উদাহরণস্বরূপ অনলাইন শপিং। আগে মানুষ বাজারে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকে কেনাকাটা করতো সেখানে খুব সহজেই, ঘরে বসে মূহুর্তের মধ্যে কেনাকাটা সম্ভব হচ্ছে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য কেনাবেচা শুরু করে সবকিছুই এখন সহজতর হচ্ছে। বাকি সবকিছুর মতই ই-কমার্স ব্যবসা খুবই দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর পরিসর হয়েছে ব্যাপক। বর্তমান বিশ্বে অনলাইন ব্যবসার কাজসমূহ ই-কমার্স এর উপর নির্ভর করছে।
ই-কমার্স কি?
ই-কমার্স হল ইলেকট্রনিক কমার্স। এটি এমন একটি মাধ্যম যেখানে কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেম এ বা অনলাইন এর মাধ্যমে পণ্য বা সেবা কেনাবেচা হয়ে থাকে। সহজ কথায় বলা যায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে কোনো কিছু ক্রয়-বিক্রয় করাই হলো ই-কমার্স। ইন্টারনেট বা ই-কমার্স এ ব্যবসা করার জন্য অবশ্যই ওয়েবসাইট দরকার এবং ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করাটা ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক বেশি জরুরি।
ই-কমার্স আধুনিক বিশ্বে অনলাইন কেনকাটায় অনেক পরিবর্তন এনেছে। অনেক বছর আগে থেকেই অনলাইনে মানুষ কেনাকাটা শুরু হয়েছে।
ই-কমার্স মাধ্যম সময় এবং শ্রম দুটোই লাঘব হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশেও রয়েছে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত ই-কমার্স প্লাটফর্ম রয়েছে এবং প্রতি বছরই ই কমার্স প্লাটফর্ম গড়ে উঠছে।
ই-কমার্স প্লাটফর্ম ব্যবসা-বাণিজ্য বা কেনাকাটার এর ক্ষেত্রে গ্রাহকের আস্থার জায়গাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত অনলাইন মার্কেটপ্লেস সবারই কাম্য। বাংলাদেশের পাঁচটি জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হলো।
১.দারাজ (Daraz).
দারাজ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এবং আন্তর্জাতিক মানের ই কমার্স প্লাটফর্ম ও মার্কেটপ্লেস। এই ই-কমার্স প্লাটফর্মটিতে প্রায় সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায়। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের একটি প্রধান বিশ্বস্ত ইন্টারনেট মার্কেট প্লেস।
বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট এবং অনলাইন শিপিং চার্জ তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে এটি খুব দ্রুতই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। দারাজে অসংখ্য ক্রেতা বিক্রেতা রয়েছে যারা নিয়মিত তাদের পণ্য কেনাবেচা করছেন।
এই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটি সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করেন। বর্তমানে শহর এবং গ্রাম থেকে উভয়ই স্থান থেকেই খুব ভালো পরিচিত। এই এ্যাপ অথবা এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেকোনো পণ্য খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব।
দারাজ প্রায়ই বিশেষ বিশেষ সময়ে অফার প্রদান করে থাকে। অফার চলাকালীন সময়ে দারাজ থেকে কিছু কিনলে বিশেষ ছাড় এবং উপহার সামগ্রী পাওয়া যায়। এছাড়াও খেলাধুলার পণ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে কসমেটিক্স, গৃহসজ্জা, ইলেকট্রনিক্স, পোশাক, দৈনন্দিন জীবনের জন্য কিছু প্রয়োজন তা সবই মিলবে দারাজে। এটি খুব সহজেই ঘরে বসে যে কোন পণ্য ক্রয় করার সুবিধা দিয়ে থাকে।
দারাজে পণ্য ক্রয় করার পদ্ধতি খুব সহজ রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে বেশ কয়েক রকম পেমেন্ট ব্যবস্থা। দারাজে যে সকল পেমেন্ট ব্যবস্থা গুলো রয়েছে তা হলো, বিকাশ, নগদ, ভিসা কার্ড, ক্যাশ অন ডেলিভারি, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ইত্যাদি। তবে ক্যাশ অন ডেলিভারি যে পদ্ধতি রয়েছে এই পদ্ধতিতে পণ্য পাবার পরে ক্যাশ সরাসরি প্রদান করতে হবে।
২.রকমারি (Rokomari.com)
বাংলাদেশের অন্যতম বই কেনাবেচার ই-কমার্স প্লাটফর্ম হল রকমারি.কম। ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করেন রকমারি প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে মাহমুদ হাসান সোহাগ। এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি মূলত বই বিক্রয়ের সাইট হিসেবে পরিচিত।
পাশাপাশি বিভিন্ন ভিডিও টিউটোরিয়াল, খেলার সামগ্রী, পেনড্রাইভ, ঘড়ি, কম্পিউটারের জিনিসপত্র, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি স্টেশনারি সামগ্রী পাওয়া যায়।
পড়াশোনা সংক্রান্ত সকল কিছু রকমারি ডট কম থেকে সংগ্রহ করা যাবে । এটি বাংলাদেশের প্রধান এবং বিশ্বস্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যার মধ্যে প্রায় সব শ্রেণীর বই পাওয়া যায়।
বিজ্ঞান কথাসাহিত্য, রূপকথা, রাজনীতি, ব্যবসা, উপন্যাস, শিল্প ও কারুশিল্প, বিশ্ব ইতিহাস ইত্যাদি সহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সব লেখকের বই পাওয়া যায়।
রকমারি ডট কমই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ক্যাশ অন ডেলিভারি সিস্টেমটি চালু করা অনলাইন ই কমার্স প্লাটফর্ম। তবে ক্যাশ অন ডিলিভারির পাশাপাশি বিকাশ, নগদ, রকেট এর মাধ্যমে পেমেন্ট করা যাবে।
৩.সাজগোজ (shajgoj.com)
বাংলা ভাষায় সৌন্দর্য চর্চা এবং সৌন্দর্য বর্ধনের প্রসাধনীর বিক্রয়ের অন্যতম অনলাইন মার্কেটপ্লেস সাজগোজ.কম যা ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় এবং বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পেরেছে। দুই টেলিকম প্রকৌশলী আর এক ফার্মাসিস্টের হাত ধরে সাজগোজ ডট কমের পথচলার বয়স ছয় বছর।
সাজগোজ ডট কম বর্তমানে বাংলা ভাষায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য ও সেলফ কেয়ারের ওয়েবসাইট।অনলাইনের পাশাপাশি ২০১৪ সাল থেকে যমুনা ফিউচার পার্কে এবং পরবর্তীতে সীমান্ত স্কয়ারে দুটি ‘অফলাইন শপ’ও আছে সাজগোজের।
সাজগোজ ডট কম শপে হেল্থ এন্ড বিউটি রিলেটেড সব ধরনের দেশি-বিদেশি পণ্য পাওয়া যায়। সুন্দর প্যাকেজিং, স্বল্পমূল্যে ডেলিভারি চার্জ এবং উপহার সামগ্রী প্রদান করার কারণে এটি পুরো বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয় এবং একটি আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। নির্দ্বিধায় সাজগোজ ডটকমের বিভিন্ন প্রোডাক্ট খুব সহজেই ঘরে বসে অর্ডার করছে এবং ব্যবহার করছে।
ওয়েবসাইটিতে বিভিন্ন ধরনের হেলথ, বিউটি এবং সেলফ কেয়ার রিলেটেড কনটেন্ট নিয়মিত পোস্ট করা হয়। এর পেজ ভিউ মাসে ছয় লাখের বেশি। পাশাপাশি ফেসবুকে ১৭ লাখ অনুসারী, ৯ হাজারের বেশি লেখা এবং ৩ শতাধিক ভিডিও নিয়ে আছে পাঠকদের সঙ্গে সাজগোজের সম্পর্ক।
৪.স্টারটেক (Startech)
প্রযুক্তিপণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত এবং বিশ্বস্ত হল স্টার টেক অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০০৭ সালের মার্চে শুরু করা প্রযুক্তি পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে সাফল্যের ১২ বছরে পা দিয়েছে। স্টারটেক মূলত ইলেকট্রনিক ডিভাইস কেনা বেচার জন্য একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম।
বর্তমানে এটি ক্রেতার আস্থার জায়গা করে নিয়েছে। স্টারটেক ছয়টি শাখার মাধ্যমে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ১১টি ব্র্যান্ডের প্রযুক্তি পণ্যের পরিবেশক হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করে চলছে। এই ই-কমার্স প্লাটফম টিতে জনপ্রিয় ও বিখ্যাত প্রায় সব ব্র্যান্ডের প্রযুক্তি পণ্য পাওয়া যায়।
মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের ইলেকট্রনিক ডিভাইস খুব সহজেই ঘরে বসে পাওয়া সম্ভব হচ্ছে এই ই-কমার্স প্লাটফর্মটির মাধ্যমে।
প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিত প্রমোশনাল অফার ঘোষণা করে। পাশাপাশি অফারে ক্রেতাদের জন্য বিশেষ মূল্যছাড় এবং উপহার সামগ্রী থাকে।
৫.বিডিশপ (bdshop)
এরপর যে ই-কমার্স প্লাটফর্মটি রয়েছে সেটি হলো বিডিসপ ডটকম। ইতিমধ্যে ওয়েবসাইটটি যথেষ্ট সুনাম এর সাথে তাদের ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে।যে কোন ধরনের ইলেকট্রির পণ্য কেনাকাটার জন্য ওয়েবসাইটি বিশ্বস্ত। এখানে মূলত খুব সহজেই যেকোনো ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী পাওয়া যাবে।
ওয়েবসাইটটিতে পণ্য দ্রুত সময়ে ডেলিভারি প্রদান করে থাকে পাশাপাশি পণ্য রিটার্ন এর ব্যবস্থা ও রয়েছে।অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মতই ক্যাশ অন ডেলিভারি সহ পেমেন্ট প্রক্রিয়া পাওয়া যাবে।
নিরাপদে অনলাইনে কেনাকাটা করার জন্য কিছু টিপস।
১. অনলাইনে শপিং করার সময় ওয়েবসাইটটির ইউআরএল টি “https” কিনা এবং সেই সাথে এড্রেস বারের প্যাডলক আইকন দেখে নিন পাশাপাশি ভিজিট করা সাইটটি নিরাপদ কিনা এ সম্পর্কিত তথ্য দিবে এসব আইকন।
২. সবসময় ভেরিফাইড পেজ বা সাইট থেকে শপিং করা উচিত যাতে আপনি সুনিশ্চিত থাকতে পারেন যাতে আপনি কোন সমস্যায় না পড়তে হয়।
৩. পুণ্য ক্রয়ের পূর্বে অবশ্যই Contact us” অংশ চেক করে দেখা উচিত কোম্পানীর নাম, ঠিকানা ও কল সেন্টার নম্বর ঠিক আছে কিনা।
৪. পন্য কেনার আগে অবশ্যই রিভিউ চেক করা।
৫. হাই এন্ড বিলাসবহুল পণ্যের ক্ষেত্রে অর্থাৎ ভাল পণ্য হোম ডেলিভারির নিশ্চয়তা পেতে সর্বদা অফিশিয়াল রিটেইলার বা সেলার থেকে ক্রয় করুন, থার্ড পার্টি থেকে নয় কারণ এমনটি হলে খারাপ পণ্য পাবার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
৬. পণ্য হাতে পেয়ে খুলে দেখে নেয়া যাবে কিনা এবং ক্যাশ অন ডেলিভারি সুবিধা আছে কিনা।
৭. পণ্যটি কতজন মানুষ কিনেছে।
৮. পণ্যটি কত গুলি রিভিউ রয়েছে, এবং রিভিউতে মানুষ কি ধরণের মন্তব্য করেছে।
৯. পণ্যের দাম বাজারের সাথে মিল আছে কিনা, অর্থাৎ অনেক কম অথবা অনেক বেশি কিনা।
১০. পণ্যটি ফেরত যোগ্য কিনা, অর্থাৎ রিটার্ন পলিসি আছে কিনা।
উপরে উল্লেখিত ই-কমার্স ওয়েবসাইট সমূহ বাংলাদেশের এবং গ্রাহকদের আস্থার জায়গা করে নিয়েছে। নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত মানসম্মত পণ্য এবং পরিসেবার দিক থেকে ওয়েবসাইট গুলো সুনাম অর্জন করে চলছে।