পেপ্যাল কী?
পেপ্যাল একটি মার্কিন আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, যা অনলাইনে অর্থ স্থানান্তরের জন্য একটি নিরাপদ ও সহজ প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করে। ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ক্রেডিট কার্ড সংযুক্ত করে অনলাইনে পণ্য ও সেবার মূল্য পরিশোধ করতে পারেন। এটি চেক বা মানি অর্ডারের মতো প্রচলিত পদ্ধতির একটি ডিজিটাল বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
পেপ্যালের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে “কনফিনিটি” নামে, যা পরে ২০০০ সালে ইলন মাস্কের সহ-প্রতিষ্ঠিত “X.com” এর সাথে একীভূত হয়ে “পেপ্যাল” নামে পরিচিতি লাভ করে। ২০০২ সালে এটি ই-বে কর্তৃক $১.৫ বিলিয়নে অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালে পেপ্যাল আবার স্বাধীন কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং বর্তমানে এটি বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশে পেপ্যালের বর্তমান অবস্থা
২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশে পেপ্যালের সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়, যেখানে প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র অর্থ গ্রহণের সুবিধা চালু করা হয়। এই সেবা “Xoom” নামক পেপ্যালের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যা প্রবাসীদের দ্রুত ও সহজে অর্থ পাঠানোর সুযোগ করে দেয়। তবে, এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে পেপ্যালের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু হয়নি।
সম্ভাব্য সুবিধাসমূহ
বাংলাদেশে পেপ্যালের পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু হলে নিম্নলিখিত সুবিধাসমূহ প্রত্যাশিত:
- ফ্রিল্যান্সারদের আয় গ্রহণ সহজতর হবে: বর্তমানে ফ্রিল্যান্সারদের আয় গ্রহণে বিভিন্ন জটিলতা ও অতিরিক্ত খরচ রয়েছে, যা পেপ্যালের মাধ্যমে সহজ হবে।
- রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে: প্রবাসীরা সহজে ও দ্রুত অর্থ পাঠাতে পারবেন, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
- ই-কমার্স খাতের উন্নয়ন: অনলাইন ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক লেনদেন সহজে সম্পন্ন করতে পারবেন, যা ই-কমার্স খাতের বিকাশে সহায়ক হবে।
চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা
পেপ্যালের পূর্ণাঙ্গ সেবা চালুর পথে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
- নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধিনিষেধ: বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নিয়মাবলী পেপ্যালের নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, যা সেবা চালুর পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
- ট্রান্সঅ্যাকশন ভলিউম: পেপ্যাল বাংলাদেশে ট্রান্সঅ্যাকশন ভলিউম কম হওয়ায় সেবা চালুতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে।
- মানি লন্ডারিং ঝুঁকি: অনলাইন লেনদেনের মাধ্যমে অর্থ পাচারের ঝুঁকি রয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক উদ্যোগ
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী ঘোষণা করেন যে, ফ্রিল্যান্সারদের আয় সহজে দেশে আনতে সরকার পেপ্যাল চালুর উদ্যোগ নিয়েছে।
উপসংহার
পেপ্যালের পূর্ণাঙ্গ সেবা চালু হলে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স এবং রেমিট্যান্স খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হবে। তবে, এর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিশ্চিত করা আবশ্যক।