একটা সময়ে চাকরির জন্য পড়াশোনা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পরীক্ষার ফল প্রধানত গুরুত্ব পেত।
বর্তমান যুগে শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে চাকরি পাওয়া যায় না। বেশ কঠিন এই চাকরির বাজারে শুধুমাত্র ডিগ্রি অর্জন করেই সাথে সাথে চাকরি পাওয়া যায় এমন ধারণা সঠিক নয়।বরং প্রায় অসম্ভব। চাকরি পাওয়ার জন্য অবশ্যই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে হয়। তাই চাকরির বাজারে অন্যদের চেয়ে নিজেকে এক ধাপ এগিয়ে রাখতে অবশ্যই ডিগ্রীর পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট স্কিল বা দক্ষতা, বিশেষ গুণাবলী এবং পারিপার্শ্বিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
দক্ষতা বা স্কিল কি?
বইয়ের ভাষায় দক্ষতা বা স্কিল বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট সময়ে কোন নির্দিষ্ট একটি কাজকে সম্পূর্ণ করার ক্ষমতা কে। দক্ষতা বাস্কেল দুই ধরনের হয়ে থাকে ১. হার্ড স্কিল এবং ২.সফটস্কিল।
হার্ট স্কিল মূলত ব্যক্তির কাজের সাথে সম্পর্কিত স্কিল বা দক্ষতাসমূহকে বোঝায় এবং অন্যদিকে সফটস্কিল হচ্ছে ব্যক্তিগত বা আচরণগত দক্ষতাকে বোঝায় যেগুলো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব তুলে ধরতে সক্ষম। তবে চাকরির দক্ষতা হল বিভিন্ন স্কিল, জ্ঞান বা আচরণ যা যেকোনো ধরনের কাজে প্রযোজ্য হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে দুটি দক্ষতাই বেশ প্রভাব ফেলে।
যে ৫ টি দক্ষতা চাকরির বাজারে সবার থেকে এগিয়ে রাখবে।
বিভিন্ন ধরনের চাকরির জন্য ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতার প্রয়োজন। তবে কিছু দক্ষতা সব চাকরির ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় এবং চাহিদা সম্পন্ন। যে পাঁচটি দক্ষতা চাকরির বাজারে সবার থেকে এগিয়ে রাখবে সেগুলো দেয়া হলো।
১. প্রযুক্তিগত দক্ষতা।
প্রযুক্তিগত দক্ষতা হলো এমন সব দক্ষতা যা ডিজিটাল বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং এর সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করাকেই প্রযুক্তিগত দক্ষতা বলা হয় যেতে পারে। প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বর্তমান যুগে সকল কাজের ক্ষেত্রেই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। তাই বর্তমান চাকরির বাজারে এগিয়ে থাকার জন্য প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা এবং দক্ষতা অর্জন করা আবশ্যক। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরী। বিভিন্ন আধুনিক ডিভাইস ব্যবহার এর ধারণা, টাইপিং,কোডিং, ফটোশপ,ভিডিও এডিটিং, মাইক্রোসফট এক্সেল, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড প্রসেসর ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা লাভ করার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব। বিভিন্ন সফটওয়্যার এর ব্যবহার,ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক ডিজাইনি,ওয়েব ডেভেলপিং,মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট ইত্যাদি সম্পর্কে জানা থাকলে চাকরি পাওয়া সহজতর হয়।
২. কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা।
ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগের দক্ষতা অর্জন করা জরুরী। কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগের দক্ষতা হল অন্যের দেওয়া সঠিক তথ্য বুঝতে পারা এবং নিজের মতামত প্রকাশ করা।শিক্ষা জীবন, চাকরি হোক কিংবা স্টাটার অথবা ব্যক্তিত্ব গঠনে কমিউনিকেশনস কিংবা যোগাযোগ দক্ষতা দেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদানের সময় যথার্থভাবে যোগাযোগ করতে পারার দক্ষতা অর্জন করা অত্যন্ত আবশ্যক একটি বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে। বিশেষত মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষাতেও যোগাযোগ করতে পারার দক্ষতাও চাকরির ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
৩.প্রেজেন্টেশন স্কিল বা উপস্থাপন দক্ষতা।
প্রেজেন্টেশন হলো এক ধরনের উপস্থাপন ব্যবস্থা অর্থাৎ যার মাধ্যমে একজন বক্তা তার দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভাব, তথ্য ইত্যাদি শ্রোতার কাছে খুব সহজেই পৌঁছায়। এটি একটি অন্যতম সিলবাদ দক্ষতা যা চাকরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। একটি প্রতিষ্ঠানে প্রেজেন্টেশনগুলো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রেজেন্টেশন এর ধরন গুলো হল গ্রুপের সাথে কথা বলা, একটি মিটিং করা, একটি নতুন পণ্য প্রদর্শন করা কিংবা একটি গ্রুপকে কোন কিছু ব্রিফ করা। চাকরির ক্ষেত্রে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বিষয়, সমস্যা অথবা নতুন ধারণা উপস্থাপন প্রেজেন্টেশন স্কিল বা দক্ষতার অন্তর্ভুক্ত। তাই এই চাকরি পাওয়ার জন্য এই দক্ষতা অর্জন করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
৪. মাল্টিটাস্কিং।
বর্তমানে কর্মক্ষেত্রে কর্মচারীদের একাধিক কাজ করা অর্থাৎ একসাথে একাধিক দায়িত্ব পরিচালনা করা সাধারণ ব্যাপার। চাকরির ক্ষেত্রে মাল্টিটাস্কিং হলো অন্যান্য দায়িত্বকে অবহেলা না করে একটি কাজে বা দক্ষতায় ফোকাস করার ক্ষমতা। মাল্টি টাস্কিং নতুন প্রকল্প গ্রহণ করতে কোম্পানীকে সহায়তা করে। কর্মক্ষেত্রে যারা মাল্টিটাস্কিংয়ে দক্ষ তারা যেকোনো টিমভিত্তিক কাজে এগিয়ে থাকে এবং দক্ষতার প্রয়োগ করতে পারে। কর্মক্ষেত্রে মাল্টিটাস্কিং দক্ষতার টি বর্তমানে বেশ চাহিদা সম্পন্ন এবং গুরুত্বপূর্ণ।
৫. প্রবলেম সলভিং স্কিল বা সমস্যার সমাধান দক্ষতা।
কর্মক্ষেত্রে যখন কোনো বিরূপ পরিস্থিতি বা অসুবিধার সৃষ্টি হয়, তখন সমাধান খুঁজে বের করতে পারাকে প্রবলেম সলভিং স্কিল বা সমস্যা সমাধান দক্ষতা বলা যেতে পারে। চাকরির ক্ষেত্রে এ দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। মূলত সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে, যৌক্তিক ও বৈধ পদ্ধতি ব্যবহার করার সক্ষমতাকেই বোঝায়। যেমন কর্ম ক্ষেত্রে বিভিন্ন অভিযোগ নিস্পত্তিতে অংশ নেয়ার মাধ্যমে এই দক্ষতা বাড়ানো সম্ভব।
শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে একটি মানানসই চাকরি পাওয়া সম্ভব যদি স্কিল বা দক্ষতা থেকে থাকে। বর্তমান যুগে চাকরি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই স্কিল বা দক্ষতা অর্জন করতে হবে। উপযুক্ত দক্ষতা থাকলে অবশ্যই চাকরি পাওয়া বেশ সহজতর হয়ে যায়। তাই চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা অর্জনের দিকটিতে গুরুত্ব দেয়ার জরুরী। চাকরির ক্ষেত্রে কর্পোরেটভিত্তিক কিছু দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। যে দক্ষতা গুলো ক্যারিয়ারে অগ্রসর হতে বা চাকরি পরিবর্তন করতে সহায়তা করে। সফট স্কিল থাকলে পেশা পরিবর্তন করা বা নতুন কাজের পরিবেশে অভিজ্ঞতা অর্জন করা সহজ হয় তাই ভালো চাকরিতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় স্কিলের সাথে সফট স্কিলে গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক।
অনলাইনে চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইট।
বর্তমানে পছন্দের চাকরি খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন হলেও আগের দিনের চেয়ে চাকরি খোজার পথটি অনেকটা সহজ হয়ে গেছে ইন্টারনেটের কারণে। চাকরির জন্য পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা অফিসে খোজ করার দরকার হয় না বরং বিভিন্ন রকম চাকরির সন্ধান ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ঘরে বসেই পাওয়া সম্ভব। পছন্দের চাকরির পাশাপাশি এপ্লাইও করা যায় অনলাইনে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে চাকরির খোজ ছাড়াও এবং চাকরি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া বেশ সহজ। চাকরির জন্য কিছু ওয়েবসাইটের থিকানা দেয়া হল।
বিডি জবস ডট কম (bdjobs.com)
চাকরি ডট কম ( cakri.com)
লিংকডইন জবস (linkedin jobs)
স্কিল ডট জবস ( skill.jobs)
জব ডট কম ডট বিডি (job.com.bd