বাংলাদেশের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০২৫ সালের শুরু থেকেই নতুন ধারায় গতি পেয়েছে। এপ্রিল মাসেও এই ধারা অব্যাহত ছিল—যা দেশের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার একটা বড় ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এপ্রিল মাসে এসেছে ২.৭৫ বিলিয়ন ডলার
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোট ২.৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ আয় বেড়েছে প্রায় ৩৪.৬ শতাংশ—যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি।
ঈদে প্রভাব, কিন্তু ধারা দীর্ঘমেয়াদি?
গত মার্চে ঈদুল ফিতরের আগে রেকর্ড ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল—যা এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আয়। যদিও ঈদের মৌসুমি প্রভাব থাকলেও, বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা একক কোনো উৎসবের প্রভাব নয়; বরং প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে সচেতনতা, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতি সহায়তা এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থানে ইতিবাচক পরিবর্তন—এই তিনটি প্রধান কারণ রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর পেছনে কাজ করছে।
মাসওয়ারি প্রবাহের চিত্র
- জানুয়ারি ২০২৫: ২.১৯ বিলিয়ন ডলার
- ফেব্রুয়ারি ২০২৫: ২.৫৩ বিলিয়ন ডলার
- মার্চ ২০২৫: ৩.২৯ বিলিয়ন ডলার
- এপ্রিল ২০২৫: ২.৭৫ বিলিয়ন ডলার
এই ধারাবাহিকতা বলছে, ২০২৫ অর্থবছর রেমিট্যান্স প্রবাহের জন্য একটি রেকর্ড-ব্রেকিং বছর হতে পারে।
বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর গুরুত্ব
অর্থনীতিবিদরা বারবারই জোর দিয়েছেন হুন্ডির মতো অবৈধ পন্থা পরিহারের ওপর। সরকারের উদ্দীপনা প্যাকেজ ও ব্যাংকিং প্রণোদনার কারণে অনেকেই এখন বৈধ পথে টাকা পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে একদিকে রিজার্ভ বাড়ছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রের আর্থিক স্বচ্ছতাও নিশ্চিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতামত
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, “এটা শুধু প্রবাসীদের অর্থ পাঠানো নয়, বরং এটি দেশের ভোক্তা ব্যয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিয়োগ প্রবণতায় সরাসরি প্রভাব ফেলছে।”
কী চোখে রাখবে নীতিনির্ধারকরা?
- রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিকতা রক্ষা
- রেমিট্যান্স বিনিয়োগে উৎসাহ দেওয়া
- ডিজিটাল চ্যানেল আরও সহজ করা
- প্রবাসী নীতির আপডেট এবং সুযোগ বৃদ্ধির দিকটি নজরে রাখা
উপসংহার
২০২৫ সাল ইতিমধ্যেই প্রবাসী আয় খাতে একটি শক্তিশালী বছর হিসেবে ধরা দিচ্ছে। সময় এসেছে এই অর্থনৈতিক সুফলকে দেশের স্থায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনায় যুক্ত করার। প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলা যায়—তাঁদের কষ্টার্জিত টাকায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।