দুবাই, সিঙ্গাপুর জাপানের মত খুব শীঘ্রই বাংলাদেশে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে অত্যাধুনিক বিমানবন্দর টার্মিনাল। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের মানুষ এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।
আগামী ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালের সফট ওপেনিং করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতিমধ্যেই টার্মিনালের ৮২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে এবং উদ্বোধনের আগে প্রকল্পের ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান।
বিগত ২০১৯ সালে তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসাংয়ের অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম এই টার্মিনালের নির্মাণ কাজটি করছেন। ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবন এবং অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা সহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে।
নতুন এ টার্মিনাল এর বৈশিষ্ট্য এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকবে ব্যাপক। সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত চাঙ্গি বিমানবন্দরের আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে দেশের জাতীয় বিমানবন্দর হযরত শাহজালালআন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালটি।
প্রায় ২১ হাজার ৪০০ কোটি টাকায় ব্যয়ে নির্মিত এই টার্মিনালটি খুব শীঘ্রই উন্মুক্ত করা হবে ব্যবহারের জন্য।৩৫০ একর জমির উপর নির্মাণাধীন এই তৃতীয় টার্মিনালটিতে একসঙ্গে থাকবে ২৪টি এক্সরে মেশিন, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১ টি বডি স্ক্যান টানেল ইত্যাদি।
এর পাশাপাশি টার্মিনালটিতে নিরাপত্তার জন্য থাকবে ২৭ টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন। যাত্রীকে বিমানবন্দরের প্রবেশের পর বিমানে ওঠা পর্যন্ত স্পর্শ ছাড়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে তল্লাশি করা যাবে।
টার্মিনাল এর সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটি হবে মর্ডান টার্মিনাল বিল্ডিং। প্রায় ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের বিল্ডিংটিতে থাকবে আধুনিকতা এবং প্রযুক্তির ছোঁয়া। প্রতিটি ওয়াশরুমের সাথে থাকবে বেবি কেয়ার রুম, ফ্যামিলি বাথরুমসহ নারী ও পুরুষের নামাজের জন্য পৃথক বিশেষ স্থান। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এর কাছ থেকে জানা গিয়েছে যে ৩য় টার্মিনালে থাকবে ২৬ টি বোডিং ব্রিজ।
প্রথম ধাপে অবশ্য চাল চালু করা হবে ১২টি ব্রিজ এবং বিমান রাখার জন্য ৩৬ টি পার্কিং লেন। অর্থাৎ ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গফুটের এই জায়গাটিতে রাখা যাবে ৩৭টি প্লেন এবং বহির্গমনের জন্য রাখা হবে ১৫ টি সেল সার্ভিস কাউন্টার।
তৃতীয় টার্মিনালটিতে বেশ কয়েকটি স্ট্রেট স্কেলেটর থাকবে অর্থাৎ যারা বিমানবন্দরের দীর্ঘ পথ হাঁটতে পারবে না তাদের জন্য এই সুবিধাটি থাকবে। পাশাপাশি গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য থাকবে মাল্টি লেভেল পার্কিং যেখানে একসাথে প্রায় সাড়ে বারোশো গাড়ি পার্কিং নিশ্চিত করা যাবে।
টার্মিনাল এর পাশে ভূগর্ভস্থ সুরঙ্গ পথ এবং উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে যার মাধ্যমে মেট্রোরেল এবং ঢাকার এক্সপ্রেসওয়ে সংযুক্ত থাকবে। অর্থাৎ তৃতীয় টার্মিনালের সাথে ঢাকার সমন্বয় সংযোগ থাকবে যার মাধ্যমে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে খুব সহজে ঢাকা শহরে পৌঁছানো যাবে।
তৃতীয় টার্মিনালের সুযোগ-সুবিধা ও নান্দনিকতা দেখে অনেক দেশের উড়োজাহাজ সংস্থা এটি ব্যবহারের যেন আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবংএর সংখ্যা পৌঁছেছে ৫৪ টি তে। সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশটিতে বিমান চলাচলের বিষয় অগ্রগতি হয়েছে।
বিমানবন্দর হলো একটি জাতির রুচির উন্নতি সৌন্দর্য বর্ধক এবং বহিঃপ্রকাশ এবং এই বিমানবন্দরেই বিদেশি অতিথি প্রবেশ করে তাদের পরিচয় ঘটে দেশের সাথে।একটি দেশের বিমানবন্দরই বলে দেয় দেশটি কতটা উন্নত এবং কতটা আধুনিক। খুব শীঘ্রই টার্মিনালটি বিমান চলাচল এবং যাত্রী সেবায় বিপুল পরিবর্তন নিয়ে আসবে এবং দেশের উন্নয়ন সাধন করবে।