spot_img

সর্বজনীন পেনশন কি? কিভাবে সর্বজনীন পেনশন

Must read

প্রথমবারের মতো দেশের মানুষের জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) চালু করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৭ই আগস্ট বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচি উদ্বোধন এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকদের পেনশন ব্যবস্থার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবী ব্যতীত দেশের সকল নাগরিক এই সর্বজনীন পেনশনের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎবাংলাদেশের নাগরিক এবং বয়স ১৮ বছরের বেশি হলে সে সর্বজনীন পেনশনের জন্য নিবন্ধন করতে পারবে। 

বিগত সাত বছর ধরে সর্বজনীন পেনশন এর ব্যাপারটি নিয়ে আলোচনা চলছিল। অবশেষে দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠী এর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের এই আইন প্রণয়ন করেছেন। 

তবে এই সর্বজনীন পেনশন কে কেন্দ্র করে  রয়েছে নানা প্রশ্ন এবং আলোচনা। কিভাবে যুক্ত হতে পারবেন, কিভাবে নিবন্ধন করতে পারবেন, কত টাকা দিতে হবে এবং কিভাবে সুবিধা ভোগ করবেন ইত্যাদি সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়া হলো এখানে। 

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩

গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনায় এই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এবং প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। তবে বিভিন্ন কারণে এই কাজটির অগ্রগতি ছিল না। এর পরবর্তীতে অর্থ মন্ত্রণালয় ঠিক এক বছর আগে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার একটি কৌশলপত্র তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী নিকট উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ থাকার পরেও সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন এর বাকি কাজ সম্পন্ন করতে এক বছর সময় লেগে যায়। 

আইনে যা রয়েছে,

সর্বজনীন পেনশন একটি ঐচ্ছিক ব্যবস্থাপনা। সরকার যতক্ষণ না পর্যন্ত এটি বাধ্যতামূলক করছেন ততক্ষণ পর্যন্ত এটি ঐচ্ছিক থাকবে। সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধনকারির বয়স সর্বনিম্ন ১৮ বছর বয়স বা তার বেশি বয়স থেকে ৫০ বছর বয়সী হতে হবে। এই বয়স সীমার অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশের সব নাগরিক অংশ নিতে পারবেন। তবে পঞ্চাশোর্ধ বয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিশেষ বিবেচনায় সুযোগ পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরাও এই আইনের আওতাধীন।

শুধুমাত্র সরকারি কর্মজীবী এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মজীবীরা এই পেনশন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারি করার পর সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতিতে সরকারি,অর্ধ সরকারি, এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মজীবীদের আওতাধীন করা হবে। 

সর্বজনীন পেনশন সুবিধা ভোগ করা চাঁদাদাতাকে অবশ্যই ধারাবাহিক ভাবে  কমপক্ষে ১০ বছর  চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা দাতার বয়স ৬০ বছর হওয়ার পর, পুঞ্জিভূত মুনাফাসহ জমানো টাকার বিপরীতে আজীবন পেনশন পেয়ে যাবেন। সর্বজনীন পেনশন থাকাকালীন পেনশনধারী ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে বাকি সময়ের জন্য মাসিক পেনশন পাবেন তার নমিনি। 

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেক চাঁদাদাতার জন্য একটি পৃথক এবং স্বতন্ত্র পেনশন হিসাব থাকবে এবং পেনশন বাবধ প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। তহবিলে জমা হওয়া অর্থ উত্তোলনের প্রয়োজন হলে চাঁদাদাতা তার অর্থের  ৫০% পর্যন্ত অর্থ ঋণ নিতে পারবে।জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সর্বজনীন পেনশন এর মাসিক চাঁদার হার নির্ধারণ করবে এবং এই চাঁদা পরিশোধের ধরন তিনটি অপশন হলো মাসিক ত্রিমাসিক এবং বার্ষিক। 

সর্বজনীন পেনশন এর জন্য যেভাবে আবেদন করবেন 

সর্বজনীন পেনশনে চার ধরনের স্কিম চালু করা হয়েছে যার মধ্যে প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী স্কিম, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিম, অনানুষ্ঠানিক খাত এবং সকর্মে নিয়োজিত মানুষের জন্য থাকছে সমতা স্কিম।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এবং সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ইউপেনশন নামক  ওয়েবসাইট তৈরি করা হয়েছে যেখানে সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কিত সকল তথ্য, সুবিধা এবং পেনশনের জন্য নিবন্ধন করা যাবে। 

নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয়, 

ব্যক্তির এনআইডি কার্ড, সক্রিয় মোবাইল নম্বর এবং ইমেইল একাউন্ট।

যেভাবে নিবন্ধিত হওয়া যাবে

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। সম্পূর্ণ অনলাইনে খুব সহজেই  নিবন্ধন করা সম্ভব। নিবন্ধনটি করার জন্য ইউপেনশন ওয়েবসাইটটি রয়েছে।  নিবন্ধন করার ধাপগুলো হলো,

  • নিবন্ধন করা প্রথম ধাপ হচ্ছে, ইউপেনশন ওয়েবসাইটে প্রথমে প্রবেশ করা যেখানে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার একটি প্রত্যয়ন পাতা আসবে। পাতায় লিখিত থাকবে ‘এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিমবহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।’ পাতার নিচে ‘আমি সম্মত আছি’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
  • ‘আমি সম্মত আছি’ অপশনে ক্লিক করার সাথে সাথেই দ্বিতীয় পাতায় নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। দ্বিতীয় পাতায় একটি অনুচ্ছেদ আসবে সেটি পড়ার পরে একইভাবে ‘আমি সম্মত আছি’ অপশনে ক্লিক করতে হবেএবং পরবর্তীতে আবেদনকারীকে প্রবাস, সমতা, সুরক্ষা এবং প্রগতি এই চারটি অপশন থেকে প্রযোজ্য স্কিম বাছাই করে নিতে হবে।
  • প্রযোজ্য স্কিম বাছাই করার পরপরেই একই সঙ্গে ১০, ১৩ বা ১৭ সংখ্যার এন আই ডি কার্ডের নম্বর,জন্ম তারিখ, মোবাইল নম্বর, ইমেইল আইডি লিখে দিতে হবে। 
  • উপরোক্ত তথ্য দেওয়ার পর পরই আবেদনকারীর মোবাইল ফোনে এবং ইমেইল এড্রেসে একটি ওটিপি বা একবার ব্যবহারযোগ্য গোপন নাম্বার আসবে যা ফর্মে উল্লেখ করে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে। 
  • ভেরিফিকেশনের পরপরই ব্যক্তির সমস্ত তথ্য এন আই ডি কার্ড এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলে আসবে। তবে আবেদনকারীর পেশা,বার্ষিক আয়, জেলা,উপজেলার নাম, বিভাগ ইত্যাদি নির্বাচন করতে হবে। সব তথ্য প্রদান সম্পন্ন হয়ে গেলে পরবর্তীতে ‘স্কিম তথ্য’ এর পাতায় যেতে হবে।  
  • স্কিম তথ্য পাতায় মাসিক চাঁদার পরিমাণ 

এবং চাঁদা পরিশোধের ধরন বাছাই করে নিতে হবে। এর পরবর্তী ধাপ হল ব্যাংক তথ্যের পাতা পূরণ।

  • ব্যাংক তথ্যপূরণের পাতায় আবেদনকারীর ব্যাংকের হিসাবের নাম ও নম্বর, হিসাবে ধরন, রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম এবং শাখার নাম দিতে হব। এবং পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।
  • নমিনির তথ্যের পাতায় গিয়ে নমিনির জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর অর্থাৎ এন আই ডি কার্ড নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিয়ে নমিনি যুক্ত করা যাবে।পেনশনের নিবন্ধনে একাধিক নমিনির নাম দেয়া যাবে। 
  • নিবন্ধনের শেষ ধাপে আগে পূরণ করা তথ্যসমূহ অর্থাৎ ব্যক্তিগত তথ্য, স্কিম তথ্য, ব্যাংক তথ্য এবং নমিনি তথ্য দেখানো হবে। উপরোক্ত তথ্যে কোন কোন ভুল থাকলে সংশোধন করতে হবে। যদি সব তথ্য সঠিক থাকে, কোন ভুল না থাকে তাহলে তাতে সম্মতি দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে গেলে আবেদন ফরম টি ডাউনলোড করে নেয়া যাবে।

সর্বজনীন পেনশনে কত টাকা পাওয়া যাবে?

সর্বজনীন পেনশন এর চার ধরনের পেনশন কর্মসূচির মধ্যে প্রবাস কর্মসূচিতে একজন ১৮ বছর বয়সী প্রবাসী যদি মাসে ১০ হাজার টাকা করে জমা দেন, তবে ৪২ বছর পর তিনি প্রতি মাসে তিন লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা করে পাবেন। ১৮ বছর বয়সী বেসরকারি কোনো চাকরিজীবী যদি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে জমা দেন, তাহলে তিনি প্রগতি স্কিম হতে ৪২ বছর পর মাসে এক লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে পাবেন। সুরক্ষা কর্মসূচির আওতাভুক্ত ১৮ বছর বয়সী কেউ যদি পাঁচ হাজার টাকা করে মাসে জমা দিয়ে পেনশনে যুক্ত হন, তাহলে ৪২ বছর শেষে তিনি পাবেন, মাসে এক লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে। 

বাংলাদেশ সরকার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নির্ধারিত সমতা পেনশন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের মাসিক চাঁদার অর্ধেক দেবে অর্থাৎ সমতা কর্মসূচিতে একজন চাঁদাদাতাকে  মাসে দিতে হবে ৫০০ টাকা এবং এর বিপরীতে সরকার দেবে আরো ৫০০ টাকা। তাহলে মেয়াদ শেষে তিনি মাসে পেনশন ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা করে পাবেন। 

- Advertisement -spot_img

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

Latest article