spot_imgspot_img

সাইলেন্ট রিস্ক: সাইবার সিকিউরিটি এখন বোর্ডরুমের মূল আলোচ্য বিষয় কেন?

ভূমিকা

একসময় সাইবার সিকিউরিটি ছিল কেবল আইটি বিভাগের দায়িত্ব। এখন এটি পুরো কর্পোরেট কৌশলের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
একটি ডাটা ব্রিচ বা র‍্যানসমওয়্যার অ্যাটাক শুধু প্রযুক্তিগত সমস্যা নয়, এটি একটি প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ব্র্যান্ড ইমেজ ধ্বংস করতে পারে।

এ কারণেই এখন সাইবার সিকিউরিটি আর টেক টিমের পেছনের ডেস্কে আটকে নেই—এটি সরাসরি বোর্ডরুমের আলোচ্য বিষয়।

সাইলেন্ট রিস্ক কী?

সাইলেন্ট রিস্ক হলো এমন হুমকি, যা সরাসরি চোখে পড়ে না কিন্তু বিশাল ক্ষতি করতে সক্ষম।
সাইবার হুমকি তেমনি এক বিপদ। এটি নিঃশব্দে একটি ব্যবসার ভিত নড়বড়ে করে দেয়।

সাধারণ কিছু সাইলেন্ট হুমকি:

  • ফিশিং ইমেইলের মাধ্যমে এক্সেস পাওয়া
  • ক্লাউড সিস্টেমে দুর্বলতা
  • কর্মীদের অবহেলার কারণে পাসওয়ার্ড লিক
  • নিয়ম না মানায় বড় অঙ্কের জরিমানা

কেন বোর্ডরুমে গুরুত্ব পাওয়া উচিত?

১. ব্র্যান্ড ইমেজ রক্ষা করা
একবার যদি গ্রাহকের তথ্য ফাঁস হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আস্থা হারিয়ে যায়। ক্ষতিটা শুধু আর্থিক নয়, দীর্ঘমেয়াদী সুনামেও লাগে আঘাত।

২. আইনগত ঝুঁকি এড়ানো
বর্তমানে ডেটা প্রটেকশন আইন, সাইবার আইন এবং ইন্টারন্যাশনাল কমপ্লায়েন্স মানা বাধ্যতামূলক। এগুলো লঙ্ঘন করলে বড় অঙ্কের জরিমানা ও মামলা হতে পারে।

৩. বিনিয়োগকারী ও অংশীদারদের আস্থা অর্জন
সঠিক সাইবার সিকিউরিটি গাইডলাইন ছাড়া কোনও কর্পোরেট আজ বিনিয়োগ পায় না। রেগুলেটরি রিপোর্টিং বা ESG রিপোর্টিংও সুরক্ষিত তথ্য প্রবাহ ছাড়া অসম্ভব।

৪. ব্যবসায়িক স্থিতিশীলতা
একটি সাইবার আক্রমণ মানেই হঠাৎ ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়া, সিস্টেম বন্ধ হওয়া, বা কোটি টাকা লস। বোর্ডরুম লেভেলে এই ঝুঁকির পরিকল্পনা না থাকলে প্রতিষ্ঠান পড়বে বড় সমস্যায়।

কর্পোরেটদের করণীয়

নিচের উদ্যোগগুলো গ্রহণ করলে সাইবার নিরাপত্তা বোর্ডরুমের মূল অংশ হয়ে উঠবে:

  • সাইবার বিশেষজ্ঞ বা CISO কে বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা
  • নিয়মিত সাইবার রিস্ক এসেসমেন্ট ও অডিট
  • কর্মীদের সাইবার সচেতনতা ট্রেনিং
  • এআই নির্ভর থ্রেট মনিটরিং টুল ব্যবহার
  • পূর্ণাঙ্গ Incident Response Plan তৈরি রাখা

বাস্তব উদাহরণ (বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে)

২০২৪ সালে একটি বড় ব্যাংকের সার্ভার হ্যাক হয়ে যায়। এতে ১০ লাখ গ্রাহকের তথ্য ফাঁস হয় এবং সেগুলো ডার্ক ওয়েবে বিক্রি হয়।

একটি জনপ্রিয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট কার্ড ডেটা লিক করে, যার ফলে বহু গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি তাদের মার্কেট শেয়ারের বড় অংশ হারিয়ে ফেলে।

এই উদাহরণগুলো স্পষ্ট করে দেয়—সাইবার নিরাপত্তা এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং বেঁচে থাকার শর্ত।

উপসংহার

বর্তমান বিশ্বে ব্যবসার সফলতা নির্ভর করে কতটা সুরক্ষিত ও প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানটি সাইবার আক্রমণের বিপক্ষে।
বোর্ডরুমের আলোচনায় যদি লাভ-লোকসানের হিসাব থাকে, তাহলে সেখানে সাইবার রিস্ক নিয়ে কৌশল নির্ধারণ করা একান্ত জরুরি।

স্মার্ট কর্পোরেটরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়। আপনি কি প্রস্তুত?

আলোচিত বিষয়সমূহঃ

  • কর্পোরেট সাইবার সিকিউরিটি
  • সাইবার নিরাপত্তা বাংলাদেশ
  • বোর্ডরুম প্রায়োরিটি
  • ব্যবসায়িক তথ্য সুরক্ষা
  • সাইবার হুমকি ২০২৫
  • কোম্পানির ডাটা ব্রিচ
  • কর্পোরেট ডাটা সিকিউরিটি

More articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

spot_imgspot_img

Latest article

আইপিডিসি জয়ী নারী উদ্যোক্তা মেলায় ডে-কেয়ার সুবিধা চালু করেছে

নির্বিঘ্নে অংশগ্রহণের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আইপিডিসি ফাইন্যান্স তাদের আয়োজিত “জয়ী নারী উদ্যোক্তা মেলা ২০২৫”-এ প্রথমবারের মতো ডে-কেয়ার সুবিধা চালু করেছে। এই...

রেমিট্যান্স প্রবাহে নতুন রেকর্ড: ১০ মাসে এসেছে ২৫.২৭ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ১০ মাসে নতুন একটি রেকর্ড গড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই...

৪৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী কর্মসংস্থান: বাংলাদেশি শ্রমবাজারে নতুন সংকেত

বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বিদেশে চাকরির সুযোগ ৪৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে, যা দেশের বৈদেশিক আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের...

স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমে বড় পদক্ষেপ: বাংলাদেশ ব্যাংকের ৯০০ কোটি টাকার ফান্ড ঘোষণা

বাংলাদেশের উদীয়মান স্টার্টআপ খাতকে এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৫ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ৯০০ কোটি টাকার একটি স্টার্টআপ...