২০২৫ সাল এখনো ভালোভাবে শুরু হয়নি, কিন্তু কর্পোরেট দুনিয়ায় ইতিমধ্যেই একাধিক আলোচিত মেজার (Mergers) আর অ্যাকুইজিশন (Acquisitions) আমাদের চোখে পড়ছে। কে কাকে কিনছে, আর কেন কিনছে—এই প্রশ্নগুলো এখন শুধু বিনিয়োগকারীদের নয়, বরং প্রতিটি সচেতন ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট লিডারের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।
বাংলাদেশ হোক বা আন্তর্জাতিক বাজার—বড় কোম্পানিগুলো এখন শুধু নিজেদের বাড়ানোর কথা ভাবছে না, তারা স্ট্র্যাটেজিকভাবে প্রতিযোগী বা সম্ভাবনাময় কোম্পানিকে অধিগ্রহণের দিকে এগোচ্ছে। কারণ, আজকের বাজারে টিকে থাকতে হলে শুধু ভালো পণ্য বা সেবা থাকলেই হয় না—ঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে জানতে হয়।
কেন এত মেজার ও অ্যাকুইজিশনের ঢল?
আমরা এখন এমন এক সময়ে আছি, যেখানে “বাজার দখল”, “টেকনোলজি অ্যাডভান্টেজ”, আর “কস্ট অপটিমাইজেশন”—এই তিনটি বিষয় প্রতিটি কোম্পানির বিজনেস স্ট্র্যাটেজির কেন্দ্রে। অনেক স্টার্টআপ বা মাঝারি আকারের কোম্পানি এখন বড় ব্র্যান্ডের রাডারে, কারণ তাদের নতুন প্রযুক্তি, ইউনিক সলিউশন অথবা নির্দিষ্ট নীচ মার্কেটে শক্ত অবস্থান আছে।
একটি বড় কোম্পানি যখন ছোট বা মাঝারি কোম্পানিকে কিনে নেয়, তখন তারা একসঙ্গে বাজার শেয়ার, ট্যালেন্ট, টেকনোলজি এবং সময়—সবকিছুই সেভ করে নেয়। ফলে, ২০২৫ সালের দিকে আমরা প্রচুর বড় বড় কোম্পানির মধ্যে “কর্পোরেট সংযুক্তি” দেখতে পাচ্ছি।
নজরে রাখার মতো কিছু উল্লেখযোগ্য M&A ট্রেন্ড:
১. টেকনোলজি-ভিত্তিক অধিগ্রহণ বাড়ছে
বিশ্বজুড়ে এখন AI, ক্লাউড টেকনোলজি, সাইবার সিকিউরিটি, এবং ফিনটেক কোম্পানিগুলোর দিকে ঝুঁকছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা জানে ভবিষ্যতের বিজনেস এই সেক্টরগুলোর ওপর নির্ভর করবে। এমনকি বাংলাদেশেও অনেক সফটওয়্যার কোম্পানি ইতিমধ্যেই স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে।
২. কনজিউমার ব্র্যান্ডগুলোর একত্রীকরণ
FMCG, ফ্যাশন, এবং অনলাইন কনজিউমার ব্র্যান্ড গুলোর মধ্যে ব্যাপক মেজার হতে দেখা যাচ্ছে। কারণ, একসঙ্গে থাকলে লজিস্টিক, সাপ্লাই চেইন, মার্কেটিং—সব খরচ কমে আসে। এ ছাড়া ব্র্যান্ড ভ্যালুও বাড়ে।
৩. হেলথটেক এবং এডটেক সেক্টরে আগ্রহ
প্যান্ডেমিকের পর থেকে হেলথটেক এবং এডটেক সেক্টর দুটিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এখন এসব সেক্টরে নতুন প্রযুক্তি আর কাস্টমার সলিউশন নিয়ে যেসব কোম্পানি কাজ করছে, তারা বড় ব্র্যান্ডের চোখে পড়ছে।
বাংলাদেশে কী ঘটছে?
বাংলাদেশেও এখন মেজার এবং অ্যাকুইজিশনের আলোচনায় আছে অনেক নাম। বিশেষ করে ফিনটেক, ই-কমার্স, এবং স্বাস্থ্যসেবা সেক্টর-ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে পার্টনারশিপ এবং অধিগ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। এতে বাজারে প্রতিযোগিতা যেমন বাড়ছে, তেমনি গ্রাহকের জন্য সেবার মানও উন্নত হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, কিছু বড় IT কোম্পানি ছোট SaaS স্টার্টআপকে কিনে নিচ্ছে, যাতে তাদের ক্লায়েন্ট বেইজ আর সলিউশন সেট আরও বড় হয়।
কাকে কেন কিনছে?
এই প্রশ্নটার উত্তর দিতে গেলে তিনটি বিষয় বুঝতে হবে:
১. টেকনোলজির প্রয়োজন: অনেক পুরোনো কোম্পানি নতুন প্রযুক্তি আনতে চায়, তাই তারা ইনোভেটিভ স্টার্টআপকে কিনে নেয়।
২. নতুন বাজারে প্রবেশ: কিছু কোম্পানি নতুন লোকেশন বা সেক্টরে ঢুকতে চায়, তাই সেই বাজারের কোনো কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করে।
৩. কস্ট কমানো: একই ধরণের সেবা দেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে একত্রীকরণ হলে অপারেশনাল খরচ কমে যায়।
২০২৫ সালে যেসব M&A দেখার মতো হতে পারে:
- বড় লোকাল ব্যাংকগুলো ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম অধিগ্রহণ করতে পারে।
- ই-কমার্স জায়ান্টরা ছোট B2C প্ল্যাটফর্ম গিলে ফেলতে পারে।
- হেলথটেক ও টেলিমেডিসিন সেক্টরে বড় স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ হতে পারে।
শেষ কথা
২০২৫ সালে কর্পোরেট দুনিয়া আগের চেয়ে অনেক বেশি গতিশীল হয়ে উঠবে, আর এই পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হবে মেজার এবং অ্যাকুইজিশন। যারা এখন থেকেই বাজার, প্রতিযোগিতা, আর কৌশলগত দিকগুলো বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, তারাই আগামীর বিজনেস ল্যান্ডস্কেপে টিকে থাকবে।
একসাথে বড় হওয়া মানে শুধু শক্তিশালী হওয়া নয়, বরং স্মার্ট হওয়া।
আলোচিত বিষয়সমূহঃ
- কর্পোরেট অধিগ্রহণ
- কোম্পানি মেজার
- বাংলাদেশের ব্যবসায় অধিগ্রহণ
- ২০২৫ মেজার ট্রেন্ড
- কর্পোরেট একত্রীকরণ
- ফিনটেক অধিগ্রহণ বাংলাদেশ
- হেলথটেক কোম্পানি কিনে নেওয়া
- স্টার্টআপ অধিগ্রহণ
- কোম্পানি কেনা বেচা খবর
- বিজনেস অধিগ্রহণ নিউজ