আপনার কাছে যদি অল্প পরিমাণ টাকা বা ৩০ হাজার টাকার আশেপাশে পুঁজি হিসেবে থেকে থাকে। আর আপনি যদি এই মূলধন দিয়েই নতুন করে ছোট কোন লাভজনক ব্যবসা খুঁজে থাকেন, তাহলে আজকের এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। কারণ আজকে এমনই স্বল্প পুঁজি ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ৫টি ব্যবসার কথা উল্লেখ করবো, যেগুলো বর্তমান সময়ে স্বল্প পুঁজি এবং স্বল্প সময় বিনিয়োগ করে অধিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিকভাবে মেধা এবং শ্রম এর ব্যবহার করেই একজন সাকসেসফুল বিজনেস ম্যান হওয়া সম্ভব।
তো চলুন দেখি নিই মাত্র ৩০ হাজার টাকার মধ্যে পাঁচটি ব্যবসার আইডিয়া।
(১) ড্রপ শিপিং বিজনেস:
ড্রপ শিপিং এক ধরনের খুচরা পরিপূরণ পদ্ধতি, ড্রপ শিপিং মানে অন্য গুদামের সংরক্ষণ না করে বিক্রি করা। অর্থাৎ খুচরা বিক্রেতা কোন ধরনের পণ্য সংরক্ষণ না করেই বিক্রি করবে। তিনি তখনই তৃতীয় পক্ষের কাছে তার পণ্যগুলো অর্ডার করবেন, যখন সে অর্ডার পাবে এবং অর্ডারকৃত সেই পণ্যগুলো সরাসরি ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এই ব্যবসাটি করার জন্য আলাদাভাবে কোন দোকান বা গুদামের প্রয়োজন হয় না। এমনকি ক্রেতার অর্ডার ব্যতীত কোন ধরনের পণ্য সংরক্ষণ করারও প্রয়োজন হয় না। যার দরুন খুব অল্প পরিমাণ পুঁজি দিয়েই এই ব্যবসাটি শুরু করা সম্ভব।
ব্যবসাটি শুরু করার প্রসেস হলো:- আপনার সন্ধানে যদি কোন ধরনের পণ্য বা সেবা থেকে থাকে, সেই ক্ষেত্রে সেই পণ্য বা সেবাটির ডিটেলস আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়া অথবা কোন একটি ওয়েবসাইটে প্রথমে আপলোড করে দিতে হবে। পরবর্তীতে ক্রেতারা আপনার ওয়েবসাইট অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই বিজ্ঞাপনটি দেখে সেই অনুযায়ী তারা আপনাকে অর্ডার করে দিবেন।
ক্রেতার অর্ডার এর উপর ভিত্তি করেই তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে আপনার সেই প্রত্যাশিত পণ্যগুলো কালেকশন করে নিতে হবে। এরপর সেই পণ্য বা সেবা গুলোর ইনভয়েস করে ডাকযোগে অথবা কুরিয়ার এর মাধ্যমে সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ক্রেতা তখন সেই পণ্যটি হাতে পেয়ে সে কুরিয়ার কে অথবা ডাকযোগের দায়িত্ব ডেলিভারি ম্যানকে পেমেন্ট করে দিবেন। সেই অনুযায়ী আপনার প্রদত্ত ব্যাংক একাউন্টে অথবা বিকাশে নাম্বারে টাকা গুলো পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
(২) গুগল এডসেন্স:
এডসেন্স এমন ধরনের একটি অনলাইন এড নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে আপনি লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করতে পারবেন। এডসেন্সের কাজ ই হলো আপনাকে টাকা ইনকাম করে দেওয়া আর সেই ইনকামের টাকা গুগল এডসেন্স নিজেই সংগ্রহ করে রাখে। আপনি যখন তখন সেই সংগৃহীত টাকা নিজের ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করতে পারবেন, এডসেন্সের এড ইউজ করতে চাইলে আপনার কিছু অনলাইন মাধ্যম থাকতে হবে।
(৩) ফটো সেলিং বিজনেস:
ফটো তোলার জন্য যদি আপনার ভাল কোন ক্যামেরা থেকে থাকে অথবা ভালো রেজুলেশনের ক্যামেরা সম্পূর্ণ আপনার যদি কোন মোবাইল থেকে থাকে, সেই ক্ষেত্রে এই ব্যবসাটি আপনি কিন্তু ঘরে বসে আজই শুরু করতে পারেন। ব্যবসা টি হলো আপনার মোবাইল দিয়ে অথবা ক্যামেরা দিয়ে আপনার ধারণকৃত ছবিটির বিক্রি করে ইনকাম করা। অনেকেরই ধারণা ফটো তোলা খুবই সহজ একটা কাজ, আসলে ফটো তোলা একটা পেশান, ফটো তুলার মধ্যে অবশ্যই আপনার নৈপুণ্য এবং বিশেষজ্ঞতা থাকতে হবে।
তাই বলবো যদি আপনি ফটো তুলতে ভালোবাসেন সে ক্ষেত্রে এই ব্যবসাটি আপনার জন্য। আপনার তোলা ফটো গুলো বিক্রি করার জন্য প্রথমেই স্টক ইমেজে আপনাকে একটা একাউন্ট ক্রিয়েট করতে হবে এবং সেই একাউন্টেই আপনার তোলা ছবিগুলো আপলোড করে নিতে হবে। কারণ বর্তমানে বিভিন্ন কোম্পানি ব্লগার, ফ্রিল্যান্সার, অনলাইন বিজনেস ম্যান এবং বিজ্ঞাপনদাতা গুলি বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে স্টক ইমেজ ব্যবহার করে থাকে।
এই ফটো গুলো ব্যবহার করার জন্য স্টক ইমেজ ওয়েবসাইটকে তারা পেমেন্ট দিয়ে থাকেন, আর যদি আপনার তোলা ফটোটিই সেখানে তারা ব্যবহার করে থাকেন, সেক্ষেত্রে আপনার একাউন্টে পৌছে যাবে সেই পেমেন্টের অংশ। অনলাইনে ফটো কিভাবে বিক্রি করব? এটা লিখে ইউটিউবে সার্চ করলেই আপনি অনেকগুলো ভিডিও পেয়ে যাবেন সেখান থেকে সে ভিডিও গুলো দেখে আপনি কিন্তু অনলাইনে একটা একাউন্ট ক্রিয়েট করে, আপনার ফটোগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারবেন।
(৪) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং:
সামান্য কিছু পুঁজি খরচ করে আপনি শুরু করতে পারেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এটা একটা অনলাইন ব্যবসা। এখানে কম কষ্টের পাশাপাশি আপনার সময় ও খুব কম ব্যয় হবে। বিভিন্ন অনলাইন কেনাবেচার সাইট বা আপনি চাইলে ফিজিক্যালি কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট আপনার রেফারেন্স এ সেল করে দিলেই আপনি কমিশন পাবেন। এই পদ্ধতিকে এফিলিয়েট মার্কেটিং বলে, যত সেল তত কমিশন, এর জন্য আপনাকে ঐ সমস্ত কোম্পানির সাথে প্রমেশনের বিষয়ে কথা বলে নিতে হবে।
(৫) গার্মেন্টস আইটেম রিপেয়ারিং শপ:
আপনি যদি কাপড়ে ভালো টিচিং করতে চান সেই ক্ষেত্রে আপনি কিন্তু একটি মেশিন ক্রয় করে আজই একটি গার্মেন্টস আইটেম রিপেয়ারিং শপ শুরু করতে পারেন। কারণ বর্তমান সময়ে একটি ড্রেস ক্রয় করার পর অনেক সময় ফিটিং করার প্রয়োজন পড়ে, এই ফিটিং করার জন্য তখন ক্রেতারা বিভিন্ন ধরনের ট্রেইলার্স এর সম্মুখীন হয়। আর এই ড্রেসগুলো ফিটিং করার জন্য ক্রেতাদেরকে অধিকাংশ সময়ই অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয় আর এমন সময় আপনার যদি একটি ড্রেস কাটিং এবং ফিটিংস এর দোকান থাকে সে ক্ষেত্রে আপনি কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি বেনিফিটড হতে পারবেন।
এই ব্যবসাটি শুরু করার জন্য অতিরিক্ত মূলধন এর প্রয়োজন হয় না, শুধুমাত্র মেশিন ক্রয় করার জন্য আপনাকে অল্প পরিমাণ টাকা ইনভেস্ট করতে হবে। আর একটি দোকান অথবা একটি জায়গা ভাড়া নিয়ে আপনি কিন্তু এই ব্যবসাটি খুব নিরিবিলি
পরিচালনা করতে পারবেন। নিজে কাজ করে অথবা কর্মী রেখে ও এই ব্যবসাটি পরিচালনা করা সম্ভব।
চলুন এবার একটা বোনাস বিজনেস আইডিয়া দেখে নিই।
ব্লগিং:
কেমন হবে যদি আপনার নিজেরই একটা ওয়েবসাইট থাকে? নিশ্চয়ই ভালো হবে? কারণ নিজের ওয়েবসাইট থাকলে নিজেই সেখান থেকে প্রচুর ইনকাম করে আনতে পারবেন অনায়াসে। ঠিক ব্লগিং তেমনি একটি ওয়েবসাইট মাধ্যম, আপনার ব্লগে আপনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী কনটেন্ট পোস্ট করতে পারবেন। আর আপনার ওই পোস্ট যত মানুষ দেখবে ততই আপনার ইনকাম হবে। তবে ব্লগটা এডসেন্স এ এড করে নিতে হবে ইনকাম শুরুর জন্য।
৩০ হাজার টাকার মধ্যে আরো কিছু ছোট ব্যবসার আইডিয়া:
মাত্র ৩০ হাজার টাকায় ব্যবসার আইডিয়ার মধ্যে আরো বেশ কিছু সম্ভাবনাময় ব্যবসার নাম রয়েছে যা আপনি চাইলেই আপনার বিবেচনায় রাখতে পারেন। তো চলুন এবার আরো কিছু ৩০ হাজার টাকার মধ্যে কিছু ছোট ব্যবসার নাম আপনাদেরকে জানিয়ে দেই।
- অনলাইনে মসলার ব্যবসা
- হোমমেড ফ্রোজেন ফুড এর ব্যবসা
- হোমমেড আচার এর ব্যবসা
- বেবী কেয়ার (হোম বেসড)
- গ্রাফিক্স ডিজাইন
- হোমমেড মসলার ব্যবসা।
- প্লাস্টিক আইটেম এর ব্যবসা।
- সবজি এর পাইকারি ব্যবসা।
- দুধ সাপ্লাই এর ব্যবসা।
- ওয়েট মেশিন এর ব্যবসা।
- জুসবার এর ব্যবসা।
- ষ্টেশনারী আইটেম এর ব্যবসা।
- স্যান্ডেল এর ব্যবসা।
সর্বশেষ কথা:-
তো পাঠক একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি আর সেটি হচ্ছে আমরা শুধু ব্যবসায়ের ধারণাই দিতে পারব, কিন্তু এর সাকসেস ডিপেন্ড করবে আপনার উপর। তাই অবশ্যই আপনি যেই ব্যবসাটি শুরু করবেন তার উপর আগ্রহ আপনার থাকতে হবে। আশা করছি আজকের পোস্টটি আপনার ভীষণ পছন্দ হয়েছে, যদি পছন্দ হয়েই থাকে তাহলে আপনার বন্ধুদের কাছে শেয়ার করে দিতে পারেন। আজকের মত আমি এখানেই বিদায় নিচ্ছি আবারো পরবর্তী কোনো আর্টিকেলে দেখা হবে সে পর্যন্ত নিজের খেয়াল রাখুন ধন্যবাদ।