বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক খাত। কিন্তু ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে দেশের রপ্তানি আয় গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে, যা এই খাতের জন্য এক বড় ধরনের সংকেত।
রপ্তানি আয়ের পতন
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (EPB) সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, এপ্রিল ২০২৫-এ বাংলাদেশ মোট রপ্তানি করেছে প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ কম।
এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাত একাই মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ অবদান রাখলেও সেই আয়েও বড় রকমের পতন দেখা গেছে।
গার্মেন্টস খাতের চাপে পড়ার কারণ
১. বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া — ইউরোপ ও আমেরিকায় মুদ্রাস্ফীতি ও ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসের কারণে অর্ডার কমেছে।
২. উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া — গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট, মজুরি বৃদ্ধির চাপ এবং কাঁচামালের দামের ঊর্ধ্বগতি এই খাতকে অপ্রতিযোগিতামূলক করে তুলছে।
৩. অর্ডার বাতিল ও বিলম্বিত পেমেন্ট — অনেক আন্তর্জাতিক বায়ার আগের চুক্তি বাতিল করছে বা নতুন করে অর্ডার দিতে অনিচ্ছুক।
বাস্তব চিত্র
ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের অনেক কারখানায় ইতোমধ্যে উৎপাদন কমিয়ে আনা হয়েছে। কিছু কারখানায় শ্রমিকদের ছাঁটাইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
একইসঙ্গে, বড় কয়েকটি কারখানা জানায়—তারা আগের অর্ডার ডেলিভারি ঠিকভাবে দিতে না পারায় আর্থিক জরিমানা দিতে হচ্ছে।
ভবিষ্যতের আশঙ্কা
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রপ্তানি আয় যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে আগামী ৩–৬ মাসের মধ্যে:
- কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়তে পারেন
- ব্যাংকিং খাতে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ কমে যেতে পারে
- ব্যবসায় বিনিয়োগে ধীরগতি দেখা দিতে পারে
করণীয়
১. প্রধান অবকাঠামোতে (বিদ্যুৎ, গ্যাস) স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা
২. বাজার বহুমুখীকরণ — শুধু ইউরোপ বা আমেরিকার উপর নির্ভর না করে নতুন বাজার অনুসন্ধান করা
৩. টেকসই উৎপাদন ও প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ানো — দামে নয়, মানে প্রতিযোগিতা করতে হবে
উপসংহার
গার্মেন্টস খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির হৃৎপিণ্ড। এই খাতের দুর্বলতা গোটা অর্থনীতিকে নড়বড়ে করে দিতে পারে। সময় এসেছে—শিল্প, সরকার ও বিনিয়োগকারী একসঙ্গে কাজ করে দ্রুত এই সংকট মোকাবেলার।
রেফারেন্স
- রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (EPB), এপ্রিল ২০২৫
- বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (BGMEA)
- দ্য ডেইলি স্টার, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ৬ মে ২০২৫