বাংলাদেশ হারাচ্ছে বছরে লক্ষ কোটি টাকা!
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র কর ফাঁকির কারণে ২০২৩ বাংলাদেশ প্রায় ২,২৬,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে। এ অর্থ দেশের বাজেট ঘাটতি কমানো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে ব্যয় করা যেত—কিন্তু তা হারিয়ে যাচ্ছে করজালের বাইরে।
কোন খাতে সবচেয়ে বেশি কর ফাঁকি?
সিপিডির গবেষণায় যে তিনটি খাতকে কর ফাঁকির মূল উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে:
১. বহুজাতিক কোম্পানি ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান
২. অনানুষ্ঠানিক খাত (informal sector)
৩. উচ্চ আয়ের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আয়ের তথ্য গোপন
এই তিনটি খাতেই আয় হয় বিপুল পরিমাণে, কিন্তু সঠিক কর প্রদানে অনীহা, দুর্বল তদারকি, এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সরকার চাহিদামতো রাজস্ব পাচ্ছে না।
সাধারণ মানুষ কি কর দিচ্ছে, বড় করদাতা নয়?
হ্যাঁ, এটাই বাস্তবতা। গবেষণায় দেখা গেছে, ভোক্তা পর্যায়ের ভ্যাট এবং আয়কর মূলত মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের ঘাড়েই বেশি চাপছে। অন্যদিকে অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও ধনীরা আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করে বিশাল অঙ্কের কর ফাঁকি দিচ্ছে।
এর প্রভাব কী অর্থনীতির উপর?
১. বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে
২. উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নে ঘাটতি
৩. জনসেবায় ব্যয় কমে যাচ্ছে
৪. বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরতা বাড়ছে
৫. রাজস্ব বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থার সংকট
সমাধানে কী প্রয়োজন?
- স্বয়ংক্রিয় কর সংগ্রহ ব্যবস্থা (Digital Tax System)
- কড়া অডিট ও মনিটরিং
- উচ্চ আয়ের শ্রেণিকে কর জালের আওতায় আনা
- রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং ন্যায্যতা ভিত্তিক করনীতি
- কর ফাঁকি প্রতিরোধে প্রযুক্তির ব্যবহার
উপসংহার
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য রাজস্ব আদায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু যখন বছরে ২,২৬,০০০ কোটি টাকা কর ফাঁকির কারণে হারিয়ে যায়, তখন প্রশ্ন উঠে—এই অর্থ কারা পাচ্ছে, আর কারা হারাচ্ছে?
সঠিক কর নীতিমালা, শক্তিশালী তদারকি এবং জনমুখী কর সংস্কৃতি গড়ে তোলার মাধ্যমেই এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। না হলে উন্নয়নের পথে এই ‘নীরব ফাঁকি’ হয়ে উঠবে সবচেয়ে বড় বাধা।
আলোচিত বিষয়সমূহে
- কর ফাঁকি বাংলাদেশ
- রাজস্ব ঘাটতি রিপোর্ট
- সিপিডি কর ফাঁকি
- বাংলাদেশে ট্যাক্স চুরি
- কর ফাঁকিতে ক্ষতির পরিমাণ
- ট্যাক্স জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশ
সূত্র (Reference):
১. The Daily Star – Tax evasion cost Tk2.26 lakh crore: CPD
২. CPD Official Report ২০২৫
৩. National Board of Revenue (NBR) Data, ২০২৪