ডিসকর্ড কি?
ডিসকর্ড বলতে আমরা একটি টেক্সট ও অডিও/ভিডিও চ্যাট সার্ভিস। অর্থাৎ স্ল্যাক, স্কাইপ ইত্যাদি অ্যাপের সুবিধা এক জায়গায় করলে অনেকটা ডিসকর্ড এর মতোই দেখাবে। বর্তমানে এটি এতএতটা জনপ্রিয় যে প্রতিদিন ডিসকর্ডে ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল ভিত্তিক মিলিয়নের উপর কল সম্পন্ন হয়।
২০১৫ সালে ডিসকর্ড এর যাত্রা কিন্তু শুরু হয় গেমারদের কমিনিউটি তৈরির প্ল্যাটফর্ম ও কমিনিউকেট করার মাধ্যমে প্রদানের কথা মাথায় রেখে। বর্তমান এর ব্যবহারকারী সংখ্যা দাড়িয়েছে ২৫০ মিলিয়নের উপর।
ডিসকর্ড এর ব্যবহার।
ডিসকর্ড এর প্রধান ব্যবহারকারী গেমারগণ হলেও এর পাশাপাশি প্রায় সকল স্তরের মানুষ ব্যবহার করছে।তারা নিজেদের টিমমেট বা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে সবসময় ডিসকর্ড ব্যবহার করে থাকে।
এখন চ্যাটিং এর পাশাপাশি আরো বিভিন্ন ধরনের ফিচার অফার করে আসছে ডিসকর্ড। চ্যাটের পাশাপাশি লাইভ স্ট্রিমিং, বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের এড করা, এমনকি নিজের সার্ভার খুলে সেই সার্ভার এর জন্য বট ও যুক্ত করা যায় এই ডিসকর্ডের মাধ্যমে। গেমারদের পাশাপাশি ইনফ্লুয়েন্সার, স্ট্রিমার, ইউটিউবারসহ ব্যবসাগুলো পর্যন্ত এর জনপ্রিয়তার জন্য ডিসকর্ড এ যুক্ত হয়েছে।র অসংখ্য ফিচার এর সাথে সকলের জন্যই কোনো না কোনো কাজের ফিচার রয়েছেই। তাই বলা যায় যে সবার জন্যই তাদের প্রিয় ডিসকর্ড সার্ভারগুলো এক প্রিয় মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
কিছু কমিনিউটি গড়ে তোলার জন্য সকল ধরনের ফিচার অফার করছে ডিসকর্ড তাই খুব সহজেই মজার মাধ্যমেই বিশাল সংখ্যাক মেম্বারের সার্ভার পরিচালনা করা যায়। এটি মূলত এর প্রতিযোগীদের সকল ফিচার একত্র করে সেগুলোকে উন্নত করে তাদের অ্যাপে যুক্ত করে দিয়েছে।
ডিসকর্ড এর সার্ভার।
ডিসকর্ড সার্ভার হলো একটি চ্যাট রুম যেখানে ব্যবহারকারীগণ খুব সহজেই ভয়েস বা টেক্সট এর মাধ্যমে কমিনিউকেট করতে পারে।
ডিসকর্ড এর মাধ্যমে প্রাইভেট চ্যাট এবং অন্যান্য কাজ করা গেলেও ডিসকর্ড এর প্রাণ কিন্তু সার্ভার ফিচারটি। কিন্তু ডিসকর্ড একাউন্ট খুলেই আপনাকে নতুন সার্ভার তৈরী করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তবে ডিসকর্ড সার্ভার তৈরী করা তেমন কঠিন কোনো কাজও নয়। যেকেউ খুব সহজেই, কম সময়ে ডিসকর্ড সার্ভার খুলতে পারে।
যদি মাত্রই ডিসকর্ড একাউন্ট খুলে থাকেন, তবে ইতিমধ্যেই থাকা অসংখ্য ডিসকর্ড সার্ভারের যেকোনো একটিতে ঢুকে পড়তে পারেন বা ডিসকর্ড অ্যাপেই সার্চ করে কিছু উল্লেখযোগ্য সার্ভার খুঁজে পাবেন। এছাড়াও গুগল সার্চ করে আপনার পছন্দের বিষয়ভিত্তিক ডিসকর্ড সার্ভারটি খুঁজে নিতে পারেন।
ডিসকর্ড সার্ভার এ কমিনিউকেট এর প্রধান মাধ্যম হচ্ছে চ্যানেলসমুহ যেখানে মূলত টেক্সট ও ভয়েস চ্যানেল হিসাবে ভাগ থাকে। টেক্সট চ্যানেসমুহে শুধুমাত্র টেক্সট মেসেজ, স্টিকার, ফাইলস, ইত্যাদি পাঠানো যায় এবং ভয়েস চ্যানেলগুলোতে ভয়েস চ্যাটের পাশাপাশি লাইভস্ট্রিম পর্যন্ত করা যায়।
ডিসকর্ড এর আসল মজা নিতে হলে নিজের কিংবা বন্ধুদের একটি নিজে সার্ভার থাকা অনেকটা আবশ্যকই বলা চলে। এছাড়াও বিভিন্ন গেম, ইউটিউব চ্যানেল, স্ট্রিমার, সফটওয়্যার এর উপর ভিত্তি করে অসংখ্য সার্ভারে তো থাকছেই।
ডিসকর্ড এর ফ্রেন্ডলিস্ট।
বেশিরভাগ সোশ্যাল মিডিয়া এর চ্যাট রুম সার্ভিসের মতো ডিসকর্ডেও ফ্রেন্ডলিস্ট ফিচার রয়েছে যেখানে দুইজন ব্যক্তি পরস্পরকে বন্ধু হিসেবে যুক্ত করলে তারা পাবলিক চ্যানেলে ব্যতীতও নিজেদের মধ্যে প্রাইভেটে টেক্সট মেসেজ আদান প্রদান করতে পারবে।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজে ফ্রেন্ডলিস্টে কাউকে এড করার উপায় হচ্ছে কোনো সার্ভারের মেম্বারলিস্টে সার্চ করা।কম্পিউটারে ডিসকর্ড অ্যাপ ব্যবহার করলে প্রতিটি সার্ভারের ডান দিকে ওই সার্ভারে একটিভ থাকা ব্যাক্তিদের তথ্য দেখানো হয়ে থাকে। সেখানে কোনো ইউজারকে এড করতে চাইলে তার নামের উপর ক্লিক করে Add Friend লেখা স্থানে ক্লিক করলেই হয়ে যাবে।
অন্যসব প্ল্যাটফর্মের মত ডিসকর্ডেও কোনো ব্যক্তিকে এড করার পর তার কাছে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এর নোটিফিকেশন পাঠানোর ব্যবস্থা রয়েছে। যে ব্যক্তিকে রিকুয়েস্ট পাঠানো হয়েছে সেখানে তিনি চাইলে ইনভাইটেশন এর পাশে থাকা বাটনসমুহ চেপে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট ডিলেট বা এক্সেপ্ট করতে পারে।
ডিসকর্ড এ যদি আপনি যাকে এড করতে চান সে যদি কোনো সার্ভারে একটিভ না থাকে, সেক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য বরাদ্দ ইউনিউক ইউজারনেম ব্যবহার করে খুব সহজেই কাউকে ফ্রেন্ডলিস্টে এড করা যাবে। অর্থাৎ ফ্রেন্ডরিকুয়েস্ট ওই ব্যক্তি এক্সেপ্ট করলে আপনারা একে অপরের ফ্রেন্ডলিস্টে যুক্ত হবেন এবং ফ্রেন্ডলিস্টে বন্ধু যুক্ত করার পর তাদের প্রাইভেটে মেসেজ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে যেকোনো ব্যবহারকারীর নামের উপর ডাবল ক্লিক করলেই প্রাইভেট চ্যাট এর উইন্ডো প্রদর্শিত হয় এবং ফ্রেন্ডলিস্টে থাকলে প্রাইভেট ভিডিও চ্যাটের পাশাপাশি কাউকে ডিসকর্ড সার্ভারেও এড করা যায় সহজেই।
ডিসকর্ড এ লাইভ।
ডিসকর্ড অ্যাপে শুধুমাত্র টেক্সট ও ভয়েস-ভিত্তিক সার্ভিস যুক্ত করা হয়নি ডিসকর্ড বরং চাইলে ডিসকর্ড ব্যবহার করেই লাইভস্ট্রিম করা যায়। “গো লাইভ” ফিচারটি ব্যবহার করে ব্যবহারকারী যেকোনো সময় স্ক্রিন সার্ভারের অন্যদের সাথে শেয়ার করতে পারে যাবে। এই সুবিধার কারনে গেমাররা তাদের স্ক্রিন শেয়ার করার সুবিধা পাচ্ছে খুব সহজেই। ডিসকর্ড এ যেকোনো এক্টিভিটি লাইভ করার জন্য সার্ভারের নামের পাশে থাকা স্ট্রিম বাটনে ক্লিক করলেই হবে।
স্ট্রিম বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথেই স্ট্রিমের কোয়ালিটি, ফ্রেম রেট, স্ক্রিন, ইত্যাদি অপশন বাছাই করতে বলা হবে। সকল সেটিংস ঠিক থাকলে লাইভস্ট্রিম চালু করতে পারেন এবং এই ফিচারের মাধ্যমে শুধুমাত্র গেম নয়, বরং যেকোনো কাজেই স্ক্রিন শেয়ার করা যাবে।
ডিসকর্ড নিট্রো বা “নাইট্রো”।
বাস্তবিক পক্ষে ডিসকর্ড কিন্তু ১০০% বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায় অর্থাৎ সার্ভার তৈরী করা, বন্ধু এড করা থেকে কমিনিউটি তৈরী করা পর্যন্ত সবকিছুই টাকা পয়সা খরচ না করেই সম্ভব ডিসকর্ড ব্যবহার করে। তবে কিছু অর্থ খরচ করে ডিসকর্ড এর বিভিন্ন এডিশনাল ফিচারস উপভোভ করা সম্ভব।
ডিসকর্ড এর পেইড সাবস্ক্রিপশন মডেল এর নাম হলো ডিসকর্ড নিট্রো বা নাইট্রো। মাসিক ১০ ডলার বা বার্ষিক ১০০ ডলারের বিনিময়ে ডিসকর্ড নিট্রো সাবস্ক্রিপশন কেনা যাবে। ডিসকর্ড নিট্রো যেসব ব্যবহারকারী কিনে থাকেন তারা সকল সার্ভারে এনিমেটেড স্টিকারস ব্যবহার করতে পারবেন।
এছাড়াও বিশেষ সুবিধার মধ্যে, ডিসকর্ড নিট্রো সাবস্ক্রাইবারগণ বড় ফাইল আপলোড করতে পারেন, যা সাধারণ ব্যবহারীগণ পারেন না। ডিসকর্ড নিট্রো সাবস্ক্রাইবারগণ ৪কে তে স্ট্রিম করার সুবিধার পাশাপাশি সার্ভার বুস্ট করার মত সুবিধাও পেয়ে থাকেন যা সার্ভার বুস্ট করলে সার্ভার এর জন্য নতুন ফিচার ব্যবহারকারীদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়।
ডিসকর্ড ডাউনলোড।
ডিসকর্ড এর সবচেয়ে অসাধারণ এবং জনপ্রিয়তার কারন হচ্ছে এটি যেকোনো ডিভাইসেই চালানো যায়। মোবাইল ডিভাইস থেকে উইন্ডোজ, ম্যাক, এবং লিনাক্স চালিত ডিভাইসেও ডিসকর্ড ব্যবহার করা যাবে। এছাড়াও ডিসকর্ড এর সকল ফিচার ব্রাউজার থেকেও ব্যবহার করা যাবে।
যেকোনো ডিভাইসের জন্য ডিসকর্ড অ্যাপ ব্যবহার করতে Discord.com এ প্রবেশ করতে হবে। তবে মোবাইল ডিভাইসের ক্ষেত্রে অ্যাপ ব্যবহার করে ডিসকর্ড ব্যবহারে অধিক সুবিধা পাওয়া যাবে।
